একটি দূর্ঘটনা নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়ন দাবীর চিত্রটাই বদলে দিয়েছে। দীর্ঘদিন যাবৎই চেষ্টা করা হয়েছে সড়ক পরিবহন আইন পাসের। কিন্তু আইনে কঠোর কিছু থাকলেই বেকে বসতেন একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী যে কিনা একজন পরিবহন শ্রমিক নেতা। পরিস্থিতি তার অনুকুলে না দেখলেই ধর্মঘটের ডাক দিতেন। দেশ হতো অচল। অগত্যা সরকার আইন পাস করা থেকে সরে আসতে বাধ্য হতো। দূর্ঘটনার পর সেই মন্ত্রী কাম শ্রমিক নেতার একটি নির্লজ্জ হাসি দেশের পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে। তাই এখনই সময় সড়ক পরিবহন আইন পাসের, হেলায় এই সুযোগ হারানো ঠিক হবে না।

পরিবহন শ্রমিকদের কাছে দেশবাশী অনেকটা জিম্মি। যাদের কালো টাকা নেই বা কালো টাকা কামানোর সুযোগ নেই তাদের এক বা একাধিক গাড়িও নেই। সেই সব সৎ ও নিম্ন আয়ের লোকদের জন্য গণপরিবহনই একমাত্র ভরসার জায়গা। কোন অযুহাতে যদি গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয় তাহলে অনেক মানুষের জীবণ যাত্রা অনেকটা থমকে যায়। আর শ্রমিক নেতা সেই সুযোগটাই সবসময় ব্যবহার করছিলো এতোদিন। এখন যা পরিস্থিতি তাতে বেশি বাড়াবাড়ি করলে তার পশ্চাদ দেশের নিচে আর ক্ষমতাধর চেয়ারটা থাকবে না। শ্রমিকদের খিস্তিখেউর শোনা সহ্য করতে পারবে কিন্তু মন্ত্রীত্বের চেয়ারটা হারানোর ব্যথা সহ্য করতে পারবে না। তাই এখনই সময়।

দেশে সড়ক নিরাপত্তা বাস্তবায়নে শুধু গণপরিবহণ শ্রমিকরাই একা দায়ী নয়। সেই সাথে দায়ী অন্য গাড়ির মালিক-চালকরাও। যেমন, মটর সাইকেল মালিকরা যেখান দিয়ে ছিদ্র পায় সেখান দিয়েই ঢুকে পড়ে। আমাদের দেশের প্রভাবশালীরা উল্টো রাস্তায় চলতে খুব পছন্দ করে, এতে আমি একটা হনু হনু ভাব থাকে। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে রিক্সাও একটা সমস্যা। রিক্সাওয়ালারা কোন শৃঙ্খলা মানতে নারাজ। সর্বপরি আমরা জনগণতো আছিই। ফুট ওভার ব্রিজ থাকলেও আমরা ব্যবহার করি না, জেব্রা ক্রসিং থাকলেও যেখান দিয়ে মন চায় হাত উঠিয়ে রাস্তা পার হই, নির্ধারিত স্টপেজ মানি না যেখানে নামা প্রয়োজন সেখানেই বাসের গায়ে থাপ্পর দিয়ে বলে বসি ‘ওস্তাদ একটু ব্রেকে পাও দেন’। ফুটপাত দিয়ে হাটতে ইচ্ছে করে না। ফুটপাথ দিয়ে না হাটার কিছু কারনও আছে যেমন, ফুটপাথ হকারদের দখলে থাকে সবসময়, যেখান দিয়ে ফাকা সেখানে থাকে ময়লার স্তুপ। তবে সবথেকে বেদনাদায়ক বিষয় হলো আমাদের আইন না মানার মানসিকতা।

আইন পাস নাহয় হলো। এবার প্রয়োজন আইনের প্রয়োগ ও আইন মানার অভ্যাস গড়া। আমাদের দেশে আইন প্রয়োগ একটা বড় সমস্যা। যারা আইন প্রয়োগ করবেন তাদের মধ্যে চাদাবাজীর প্রবণতা বেশি। গাড়ি থামিয়ে কালেকশন করবেন না আইন মানতে বাধ্য করবেন? দুটি তো একসাথে চলতে পারে না। আর আইন প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা হচ্ছে ক্ষমতা। আমাদের ধরলেই পরিচয় দেই আমি সাংবাদিক, আমি আইনজীবী, আমি শিক্ষক, আমি ডাক্তার, আমি অমুক নেতার শালার চাচতো ভাইর বন্ধু, আমি পুলিশ কর্তার দুঃসম্পর্কের নিকট আত্মীয় ইত্যাদি। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে বাছবিচার করতে করতে কম্বলের মত পশমই থাকে না। আর যাদের উপর প্রয়োগ হয় তাদের কোন ক্ষমতা নেই বা অন্যায়টাকে টাকার বিনিময়ে রফাদফা করে ফেলেন।

তবে যে যতই শক্তিশালী হোক না কেন, আইন পাস হলে কিছুটাতো কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করা হবে। দু-চার জন ক্ষমতা ও চাতুরতা দিয়ে বেরিয়ে গেলেও কিছু ফল পাওয়া যাবে। তাই এখনই সময় আইন পাস করার এবং আইন ব্যবহার করার। আবারও বলছি, হেলায় সুবর্ণ সুযোগ হারাবেন না, প্রিয় রাষ্ট্রযন্ত্র।

asadjewel@gmail.com, www.asadjewel.com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here