ঘুরে ঘুরে চলছে মধু আহরণ। মৌ মাছি এ ফুল থেকে ও ফুলে ঘুরে আর মৌয়ালী এ জেলা থেকে ও জেলায় ঘুরে ঘুরে মধু সংগ্রহ করে। এখন শীতের সময়। মৌয়ালীরা এসেছে শরীয়তপুর জেলায় আর মৌ মাছিরা যাচ্ছে সরিষা, ধনিয়া আর কালজিরার ফুলে ফুলে। এভাবেই চলে বাণিজ্যিক ভাবে মধু আহরনের কাজ। শরীয়তপুর জেলার জাজিরায় এমন ভ্রাম্যমান মধু চাষীরা প্রায় এক হাজার মৌ বক্স নিয়ে মধু আহরণের কাজ করছে। আর মৌমাছিরা ফুলে পরাগায়ন ঘটিয়ে ফসলের উৎপাদন বাড়িয়ে দিচ্ছে।

শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলা সদর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার পশ্চিমে মাঝিরঘাট-শরীয়তপুর মহাসড়কের দুই পাশে বিশাল বিশাল ফসলের মাঠ। মহাসড়কের পাশে আড়াচন্ডী মোড়, কাজির হাট ও চৌকিদার বাড়ী ঘাট সংলগ্ন এলাকায় চারটি স্থানে মৌয়ালীরা মধু সংগ্রহের জন্য বসেছে তাদের সরঞ্জাম নিয়ে। প্রায় এক মাস যাবত তারা এসেছে। সরঞ্জামের মধ্যে মৌমাছিসহ বক্স, মধু সংগ্রহের জন্য ঘুর্ণন মেশিন, মধু রাখার পাত্র। তাবু খাটিয়ে রাত দিন চব্বিশ ঘন্টা তদারকি করছেন মৌ বক্সের মালিকসহ শ্রমিকরা। রাত দিন পরিশ্রম করে মৌ মাছির কামড় খেয়ে একেকজন শ্রমিকের বেতন মাত্র দুই হাজার টাকা।

DIGITAL CAMERA

জাজিরার আড়াচন্ডির মোড়ে একশত পঞ্চাশটি মৌ বক্স নিয়ে টাঙ্গাইল থেকে এসেছে মিজানুর রহমান। মাত্র বিশটি মৌ বক্স দিয়ে যাত্র শুরু করে এখন তার একশত পঞ্চাশটি বক্স। মিজানুর রহমান জানায়, সপ্তাহে এক দিন মধু সংগ্রহ করে। প্রতি সপ্তাহে পনের থেকে বিশ মন মধু আহরন করা যায় ভরা মৌসুমে। মিজানুর রহমান বলেন, মধু সংগ্রহ করলেও ভাল দাম পাই না। সরকার যদি পৃষ্ঠপোষকতা দিত তবে আমরা লাভবান হতে পারতাম। প্রতি কেজি মধু বিক্রি করি দুইশত থেকে আড়াইশ টাকা। অথচ প্যাকেটজাত করে আমাদের মধু বিক্রি হয় তিনশত থেকে চারশত টাকা।

সাতক্ষীরার সুন্দরবন এলাকার সুকুমার মন্ডল তিন বছর যাবত মধু আহরনের ব্যবসা করছে। এবার এসেছে জাজিরার কাজিরহাট নামক স্থানে। দুইশটি মৌ বক্স নিয়ে বসেছে ধনিয়া খেতের পাশে। সুকুমার জানান, এর আগে সরিষা খেতের পাশে মৌ বক্স বসিয়েছিল। ধনিয়া ফুলের মধু সংগ্রহ শেষে যাবে লিচু বাগানে। লিচুর ফুল শেষ হলে ফিরে যাবে সুন্দরবনে। এভাবেই ঘুরে ঘুরে তারা সংগ্রহ করে মধু। আক্ষেপ একটাই, বাজারজাতের অভাবে ভাল দাম পায় না।

শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মোঃ গোলাম মহিউদ্দিন বলেন, মধু সংগ্রহের সাথে সাথে মৌমাছি কৃষকদের সবচেয়ে বড় যে উপকারটা করছে তাহলো ফুলে পরাগায়ন ঘটিয়ে ফসলেরও উৎপাদন বাড়িয়ে দিচ্ছে।

asadjewel@gmail.com, www.asadjewel.com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here