সম্প্রতি ঢাকায় ছড়িয়ে পড়েছে চিকুনগুনিয়া রোগ। এ রোগের জন্য কে দায়ী এ নিয়ে চলছে তুমুল বিতর্ক। সরকার বলছে সিটি কর্পোরেশন দায়ী। আবার সিটি কর্পোরেশন বলছে তারা দায়ী নয়। সিটি কর্পোরেশন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রনের জন্য কাজ করছে। চিকুনগুনিয়া চিকন না মোটা তারা জানে না! যেহেতু সরকার দায় চাপাচ্ছে সিটি কর্পোরেশনের উপর আর সিটি কর্পোরেশন দায় অস্বীকার করছে, তাহলে দায়টা কার তা বের করা জরুরী। দুটি অর্গানই যখন দায় অস্বীকার করছে তখন তাদের দিয়েতো আর দায় সনাক্ত করা যায় না। তাই নন গভার্মেন্ট থেকে নন জুডিশিয়াল তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে!! তারা চিকুনগুনিয়ার জন্য দায়ী সনাক্ত করার কাজ করেছে। তাতে বেরিয়ে এসেছে কে দায়ী!! তবে চিকুনগুনিয়ার দায়ী সনাক্তের আগে এ সম্পর্কে আমাদের তদন্ত কমিটি বিভিন্ন পত্র পত্রিকার সংবাদগুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়েছেন।

এ পরিস্থিতিতে জনগন দিশেহারা হয়ে যে নন জুডিশিয়াল তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলো সেই তদন্ত কমিটি সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন!! সূদীর্ঘ প্রতিবেদন এখানে উল্লেখ করা সম্ভব নয় তাই প্রতিবেদনের খন্ডিত অংশগুলো তুলেধরা হলো!!

তদন্ত কমিটির সদস্যগণ বলেছেন, জনগন মহা মারি মহা মারি বলে চিৎকার না করে সকলে যদি মশা মারি মশা মারি বলে চিৎকার করতো তাতে লাভ হতো! অযথা চিৎকার চেচামেচি করে কি লাভ? চিকুনগুনিয়া ছড়ানোর দায় জনগনের! কারন, জনগন মশার ডিম পাড়ার জায়গা করে দেয়। জনগন ডাব খেতে পছন্দ করে, ডাব খাওয়া হলে কেটে ভিতরের লেওয়া খায় (ডাবের শাষ) আর লেওয়া খাওয়া শেষে ছুড়ে ফেলে দেয়। ডাবের ছুড়েফেলা অংশে পানি জমে আর পারিতে ডিম পারে এডিস মশা! ডাবের পানি খাবেন, লেওয়া খাবেন আর মশার কামড় খাবেন না তাকি হয়!!

আমাদের দেশের ধনীরা গাড়ি ব্যবহার করে। গাড়ি চাকা মেরামত করার পর ছোট মানসিকতার জনগন পুরাতন টায়ার যতœ করে রেখে দেয়, সেই টায়ারে পানি জমে, সেই পানিতে ডিম পারে মশা! আমাদের দেশের ধনীর দুলালরা কোমল পানীয় খায় ক্যানে, সেই ক্যান ফেলে দেওয়ার পর জনগন তা পরিস্কার করে না, ফলে ক্যানের ভিতর জমে থাকা পানিতে মশা ডিম পারে আর তাতেই চিকুনগুনিয়া ছড়ায়!

আমাদের দেশের জনগণের রয়েছে শিক্ষার অভাব। বস্তিবাসীদের শিক্ষার সুচকতো প্রায় শুন্যের কোঠায়!! বস্তিবাসী কুদ্দুস মিয়ার মতে, এসিড মশার কারনে তাদের ঘরে চিকুনগুনিয়া ঢুকেছে। এসিড মশা কামড় দিয়ে ভিতরে এসিড ঢুকিয়ে দিচ্ছে, এসিডের ত্যাজে ঐ জায়গা পরে লাল হয়ে যায়যে!

তদন্ত কমিটি লখাই মিয়ার কাছে জানতে চেয়েছিলো, চিকুনগুনিয়া কি ও কেন হয় জানেন? লখাই মিয়া বলেন, মনে হয় মশা গুয়ের উপর বসে, মুখ দিয়ে চিকন চিকন গুয়ের টুকরা এনে আমাদের শরীরে উপর বসে এবং কামড় দিয়ে ভিতরে গুয়ের বিজানু ঢুকাইয়া দেয়, তারপর যে রোগ হয় ওইডাই চিকুনগুনিয়া।

মালেশ্বর বাবুকে চিকুনগুনিয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাস করলে তিনি যে মন্তব্য করেছেন তা কিছুটা সম্পাদিত করে একাশ করতে হলো, তিনি বলেন, চিকন গো… না মোডা গো… তা দিয়া আমরা কি করুম? আমরা হইলাম সাধারণ আম জনতা। আম জনতার খাতায় নাম লিখাইয়া চিকন মোডা বাছার সুযোগ আছে? একটা হইলেই হয়!! (তিনি কিছুটা ক্ষিপ্ত, কথা না বাড়িয়ে আমাদের তদন্ত কমিটি ভালয় ভালয় কেটে পড়েন)।

তদন্ত প্রতিবেদনে তদন্তকারীগণ এই মর্মে একমত হয়েছেন যে, তারা আসলে কোন বিষয়ে একমত নন। তদন্তকারী কারো মতে চিকুন গুনিয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি দায় হচ্ছে আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ার। তাদের দেশের অভূক্ত মশা উড়ে উড়ে আমাদের দেশে এসে সাধারণ মানুষের উপর হুমড়ি খেড়ে পড়ায় রোগটা ছড়াচ্ছে। আর যেমন খাচ্ছে তেমনি ডিম পেড়ে বংশ বাড়াচ্ছে।

অপর এক তদন্তকারীর মতে, দেশের জনগনই এর জন্য দায়ী, তারা পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে উদাসীন, তারা ইচ্ছাকৃত ভাবে মশার কামড় খায়, ঠিকমত মশারি টানায় না, তাদের বোঝা উচিত মেয়রতো আর ঘরের ভিতর গিয়ে মশারি টানাবে না!

অপর এক তদন্তকারীর মতে, ডাব বিক্রেতা, গারির গ্যারেজ মালিক দায়ী, কারন তারা ডাবের খোসা, টায়ার টিউব যথাযথ স্থানে ফেলে না এবং পরিস্কার রাখে না। এবার লেওয়া খাওয়ার মজা বুঝুক!!

নন জুডিশিয়াল তদন্ত কমিটি যেহেতু কোন বিষয়ে একমত হতে পারেনি তাই প্রতিবেদন পাঠে জনগন এই মর্মে একমত হয়েছে যে, চিকুনগুনিয়ার জন্য আসলে জনগনই দায়ী!!! তবে সরকারকে তারা কিছু পরামর্শও দিয়েছেন। তাদের মতে আর দেরি না করে সিটি করপোরেশনকে এখনি মশা মারতে কামান সরবরাহ করা উচিত!

asadjewel@gmail.com, www.asadjewel.com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here