দেশে চৈতা পাগলের অভাব নাই। বছরের বেশিরভাগ সময়ই ভালো থাকে। যখন চৈত্র মাস আসে, গরম একটু বেশি পরে, অমনি পাগলামি শুরু হয়ে যায়। এধরনের পাগলকে আমরা চৈতা পাগল হিসাবেই চিনি এবং ডাকি।

সম্প্রতি একটা বিষয় বেশ আলোচনায় আছে। একটু বেশি মাতামাতি হলেই যেমন আমরা বলি ভাইরাল হয়ে গেছে, তেমনি ব্যারিস্টার মইনুল ইসলামের সাথে মাসুদা ভাট্টির তর্ক-বিতর্ক দেশে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে ফেসবুক গরম, আদালতপাড়া গরম, মিডিয়া গরম, ইউটিউব গরম, অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও গরম হয়ে উঠেছে। আর উল্লেখিত মাধ্যম গরম হওয়ার সাথে সাথে অনেকে কার্তিক মাসে হালকা শীতের আমেজে চৈত্র মাসের আমেজ পেয়ে গেছে। আর জেগে উঠেছে চৈতা পাগলেরা।

বড় বড় বিজ্ঞজনরা বলেন, মানুষ মানুষের জন্য। নারী যেমন মানুষ তেমনি পুরুষও মানুষ। ঢাকার বহুল প্রচার পাওয়া গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা যেমন মানুষ তেমনি ঢাকার ফুটপাতে গণমাধ্যম পল্লীর পাশে রাতে পন্যবাহী সবজির ট্রাক খালাশ করার কাজের জন্য অপেক্ষমান টুকরির মধ্যে কুন্ডলি পাকিয়ে শুয়ে থাকা ব্যক্তিটিও মানুষ। কথার যৌনাঙ্গ দিয়ে ধর্ষিত উচু স্তরের তর্কবিশারদ নারী যেমন মানুষ তেমনি কুড়িগ্রামের নিভৃত পল্লীতে মোড়ল বেটার পুত্র দারা ধর্ষিতাও মানুষ। বহুল প্রকাশিত ও প্রচারিত দৈনিকের সাংবাদিক যেমন মানুষ তেমনি শরীয়তপুরের মত অবহেলিত জেলার একজন জেলা প্রতিনিধি কাজী নজরুল ইসলামও একজন মানুষ। কিন্তু সেই মানুষগুলো যখন আক্রান্ত হয় তখন প্রতিবাদী মানুষগুলো যেন কেমন কেমন আচরণ করেন।

নিভৃত পল্লীর একজন সাধারণ মেয়ে ধর্ষিত হলে পত্রিকার ভিতরের পাতায় সিঙ্গেল কলামে ছোট করে নিউজ প্রকাশিত হয়। নিউজ বড় হলে লাইনেজ বিল দিতে হবে তাই যতটা কাটা যায়, কিন্তু বড় কোন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মুখের কথায় ধর্ষিত হলে চৈতা পাগলরা জেগে যায়। বড় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মামলায় পড়লে মূহুর্তে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পায় আর জেলার সাধারণ সাংবাদিক মিথ্যা মামলা খেলে জেল খাটে। বড় সম্পাদক গোত্রের সাংবাদিক মামলা খেলে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে আর ছোট সাংবাদিক মামলা খেলে চাকরি খোয়ায় বিনা বিবেচনায়, বিনা তদন্তে, বিনা বিচারে। এই যে প্রতিবাদের পার্থক্য এখানেই দুঃখ লাগে। চৈতা পাগলরা সাধারণ মানুষের পক্ষে নাই, আছে ক্ষমতা, রুটি, হালুয়ার পক্ষে। বড় সম্পাদকদের বিরুদ্ধে মামলা হলে বিশজন, পঞ্চাশজন বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতি দিয়ে নিন্দা জানায় কিন্তু শরীয়তপুরের কাজী নজরুল ইসলামদের মত সাংবাদিকরা সত্যের পক্ষে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লিখে মামলার পর মামলা খেলেও তাদের কলম দিয়ে একটা শব্দও বের হয় না, তাদের জন্য একমাত্র সম্পাদকই একটা পত্র লিখে তা হলো টার্মিনেশন লেটার! ভাত দেয়ার মুরোদ নেই চাকরি খাওয়ার গোশাই!

চৈতা পাগলরা আবার বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত। কেউ লাল দল, কেউ নীল দল, কেউ সাদা প্যানেল, কেউ গোলাপী প্যানেল। কিন্তু অবহেলীতা সাধারণ মানুষের জন্য কোন প্যানেল দেখি না। টক শোতে দেখি অমুক সমর্থক আলোচক, তমুক সমর্থক সমালোচক, অমুক বিশারদ, তমুক বিশারদ। কই, মানুষ সমর্থক, সুস্থ সমাজ সমর্থক কোন বিশারদ তো দেখি না।

কেন এমন হয়? কেন এমন হচ্ছে? সবাই কি রুটি হালুয়ার পিছনে দৌরাচ্ছে? দেশে যখন খাদ্যের অভাব ছিলো, দেশে যখন মঙ্গা, খড়া, অনটন ছিলো তখনতো এত ক্ষুধার্ত বিবেক ছিলো না। এখন দেশ খাদ্যে অনেক সমৃদ্ধ। কিন্তু মানুষের ক্ষুধা কেন এত বেড়েছে। তাহলে কি এটা ক্ষমতার ক্ষুধা? যদি ক্ষমতার ক্ষুধায় ক্ষুধার্ত হয় তবে কেন তারা সুশীল নামে আখ্যায়িত হন? তারাতো ভূখা, নাঙ্গা, ক্ষুধার্ত ছাড়া কিছুই না। একটি ক্ষুধার্ত বিবেকের কাছে আমরা কি আশা করতে পারি? পাগলের কাছেই বা আমরা কি আশা করতে পারি? পাগলের যেমন বুদ্ধি থাকে না, আবার ক্ষুধা থাকলেও মাথায় বুদ্ধি খেলে না। সুতরাং চৈতা পাগলদেরও কোন বিবেক নাই।

আসুন, চৈতা পাগল থেকে সাবধানে থাকি। আমরা সাধারণ মানুষ হলেও আমরা কিন্তু সব বুঝি! একটা লোকাল উক্তি বলি, ‘আমরা কিন্তু সব বুঝি, কে আমার বুকের দিকে তাকায় আর কে পেটের দিকে তাকায়, আমরা কিন্তু সব বুঝি।’

সব শেষে একটা বিষয় ক্লিয়ার করে দেই। আমার এই লেখায় কেউ যদি সংক্ষুব্ধ হন তবে আমার বিরুদ্ধে কোন এ্যাকশনে গিয়ে লাভ নেই। কেন লাভ নেই তা একটা কৌতুকের মাধ্যমে বলি- এক যুবককে পুলিশে ধরেছে। বিচারক যুবককে বললো-

-তোমার বিরুদ্ধে দেশের অর্থ মন্ত্রীকে বেকুব বলার জন্য চার্জ গঠন করা হলো।

যুবক-আমিতো কোন দেশের অর্থ মন্ত্রী তা বলি নাই। আমি উগান্ডার অর্থ মন্ত্রীকে বলেছি।

বিচারক-কোন দেশের অর্থ মন্ত্রী বেকুব আমরা জানিনা মনে করো? আমাদেরকে দেখে কি তোমার আবুল মনে হয়? আমিও কোন দেশের চৈতা পাগলের কথা বলেছি তা কিন্তু বলিনি!

asadjewel@gmail.com, www.asadjewel.com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here