দেশ এখন আতঙ্কের এক জনপদ। আর আতঙ্কের নাম জঙ্গি। দেশে বিদেশে জঙ্গি মানেই ইসলামিক জঙ্গি! এমন ভাবে মিডিয়া প্রচার করে যেন বিশ্বে আর অন্য কোন ধর্মীয় উগ্রবাদী বা জঙ্গী নাই। আর আমাদেরও দুর্ভাগ্য যেই উগ্রবাদী ধরা পরে, তার নামের আগে থাকে মোহাম্মদ শব্দটা। আবার হামলা শেষে আল্লাহু আকবার স্লোগান দিয়ে বীর দর্পে চলে যায় বা যাওয়ার চেষ্টা করে। ফলে জঙ্গি মানেই ইসলাম ধর্মের লোক! অথচ সমস্ত বিশ্বেই উগ্রবাদ এখন একটি বিষ ফোড়ার মত যন্ত্রনাদায়ক ব্যধি যা অন্য দেশের মত আমাদের দেশেও আছে। রাজনৈতিক কারনে হোক বা রাষ্ট্রীয় কারনে হোক নাশকতার ঘটনা ঘটার সাথে সাথে কৌশলগত কারনে সরকার তা অস্বীকার করে। বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে বেশ কিছু অঘটনের জন্ম দেয় জঙ্গিরা। আরো অঘটন ঘরার হুমকি মাথায় নিয়ে ঘুরছি আমরা। হুমকিগুলো সত্যিও হতে পারে আবার এক শ্রেণীর লোকের উড়ো চিঠিও হতে পারে। কিন্তু হুমকিকে তো আর সাধারণ ভাবে নেয়া যায় না। অঘটন না ঘটলেই ভাল, সতর্ক না থাকলে ঘটেওতো যেতে পারে!

সারা বিশ্বে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ঘটছে হত্যাযজ্ঞ। কেউ গাড়ি চালিয়ে শত মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। আবার কেউবা গ্রেনেড ফাটিয়ে, কেউবা গুলি ফুটিয়ে, কেউ কেউ আবার ছুড়ি-চাকু-ধারালো অস্ত্র নিয়ে নেমে পড়ছে নাশকতায়। ঘটনা ঘটিয়ে কেউ পালিয়ে যাচ্ছে, আবার কেউ পালাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে। শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী পরিবারের-দরিদ্র পরিবারের, আলেম বেশে-জালেম বেশে, শিক্ষক হয়ে-শিক্ষার্থী হয়ে নাশকতাকারীর খাতায় নাম লিখিয়ে চালাচ্ছে হত্যাযজ্ঞ। বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবার মাদ্রাসা থেকে প্যাগোডার সব স্থানেই বিরাজ করছে নাশকতাকারীরা। শুধু দোষ পড়ে ধর্মীয় লেবাসের উপর। সব যায়গায়ই চলে ধর্মের অপ ব্যাখ্যা। নাশকতাকারীরা কেবলই জঙ্গি তাদের কোন ধর্ম নেই। ধর্ম কখনো সাধারণ মানুষ হত্যার অনুমতি দেয় না। এক শ্রেণীর লোভি ধর্মান্ধরা নাশকতার পথ বেছে নিয়ে নিজেদের ধর্মীয় উগ্রবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কলকাঠি নাড়ছে পিছনে বসে ধর্মীয় নেতার বেশে মুখোশধারী কিছু কুচক্রী। তারা বিশ্বের বিশেষ কোন এস্যাইনমেন্ট কার্যকর করছে মাত্র। যে বেশে নিজেদের জাহির করলে কার্য সিদ্ধি করা যাবে সেই বেশই ধারণ করছে। আসলে তারা ধর্মের কেউ না। শান্তি প্রিয় বিশ্ববাসীর শান্তি দেখলে তাদের গা জলে। বিশ্ব বাণিজ্যের বড় পরিবেশক এই মুখোশধারীরা। সাধারণ মানুষ সাধারণ চোখে দেখে, সাধারণ জ্ঞানে তাদের চিনতে পারে না। ফলে তাদের মিঠা কথায় ভিটা খালি করে জড়িয়ে যাচ্ছে উগ্রপন্থায়।

আমাদের দেশে সম্প্রতি দুজন সমকামী জঙ্গিদের হামলায় নিহত হয়। সাথে সাথে পশ্চিমা বিশ্বের চোখ বড় বড় হয়ে যায়। বিশ্ব মোড়ল তেতে উঠে। ঘটনার নিন্দা, তদন্তের আগ্রহ, নিজের দেশের নাগরিকদের সতর্ক করা সহ নানান পদক্ষেপ নেয়। আমাদের দেশের ঘটনার কিছু দিন পর আমেরিকায় এক সমকামি জঙ্গি সমকামিদের ক্লাবে হামলা চালিয়ে অর্ধশত সমকামীকে গুলি করে মেরে ফেলে। এবার আর ঐ মোড়লদের মুকে কথা ফোটে না। আমাদের দেশের অঘটনের পর সবাই বলে গোয়েন্দারা কি করেছে? তারা কেন আগাম তথ্য পেল না ইত্যাদি। মোড়লদের দেশে এতবড় ঘটনা ঘটলেও তাদের নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে কোন কথা হয় না। তাদের তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞান, অস্ত্র-শস্ত্র, সুযোগ-সুবিধা কোন কমতি না থাকলেও নাশকতার কোন পূর্বাভাষ তারা জানতে পারে না, আমাদের দেশের নিরাপত্তা বাহিনী কিভাবে জানবে? আসলে নাশকতাকারীরা মনে মনে যা চিন্তা করে তা কোন প্রযুক্তিতেই ধরা পরে না। আর নাশকতাকারীরা ধর্মীয় লেবাশ নেয়। ভারতে উগ্র হিন্দুবাদীরা যে চিন্তা চেতনা নিয়ে হঠাৎ অঘটন ঘটায় সেটা দেখে কেউ কি ধারনা করতে পারে তাদের মনে এত ঘৃন্য চিন্তা বিরাজ করছে? আমাদের দেশে যাদের আমরা ইসলামীক জঙ্গি বলে আখ্যা দেই তাদের দেখলে কি বোঝার উপায় আছে তাদের মনে এমন ঘৃন্য চিন্তা বিরাজ করছে? করার পর বোঝা যায় তারা কতটা ঘৃন্য মানব রুপি ঘাতক।

সারা বিশ্বে এত নাশকতা এত হানাহানি এত প্রাণহানী কিন্তু বিশেষ একটা দেশে কোন অঘটন ঘটে না তাহলো ইসরাইল। ইসরাইলের মানুষ কি এতই ধোয়া তুলসি পাতা! তারা কি এতই সতর্ক যে তাদের দেশে কোন অঘটন ঘটার আগেই সতর্ক হয়ে যায়!! আমার তো তা মনে হয় না। ইসরাইলের মত বর্বর জাতি শান্তিকামি বিশ্বে আর দ্বিতীয়টি আছে বলে আমাদের জানা নেই। ইসরাইলীরা ফিলিস্তিনের মাটিতে যে পরিমান বোমা ও গুলি বর্ষণ করেছে, যদি না করতো তবে অস্ত্র উৎপাদনকারীদের অস্ত্র নিয়ে কান্না করা ছাড়া কোন উপায় থাকতো না এবং ইসরাইল আজ আর ধরনীর উপর থাকতো না, অস্ত্রের বারে দেবে সাগরের তলদেমে দিয়ে ঠেকতো। ইসরাইলীরা ফিলিস্তিনের যে পরিমানের নারী-শিশু-সাধারণ মানুষ হত্যা করেছে এর বিচার হলে সমগ্র ইসরাইল জাতিকে একাধিকবার ফাঁসির দড়িতে ঝোলাতে হবে। যে জাতি নারী-শিশু কাউকেই বাদ দেয় না তারা এত সাধু আর সতর্ক হয় কি করে? ইসরাইলের মত ছোট্ট একটি রাষ্ট্র কিভাবে এত সাহস পায়?

বিশ্বে বড় বড় অঘটন যা হয়েছে তা জানে না এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। বলদেও জানে আমেরিকায় দুইটা জোড়া বিল্ডিং বিমান দিয়া ভাইঙ্গা দিছে জঙ্গিরা। আমেরিকার ঐ টুইন টাওয়ারে হামলা হলো। হাজার হাজার মানুষ মারা গেল। বিশ্বের এমন কোন দেশ নাই যেই দেশের দুই চার দশ জন করে নাগরিক মারা যায় নাই। সব দেশের মানুষই মারা গেছে শুধু ইসরাইলের কোন নাগরিক মারা গেছে তা শোনা যায় নাই। লাদেনকে জ্ঞানীগুনিরাই কিছুটা চেনতো আর চেনতো আমেরিকা। টুইন টাওয়ার ভাঙ্গা হলো বিমান দিয়ে, নাম হলো লাদেনের! ঘোষণাও দিল লাদেন যে সেই ভাঙ্গিয়েছে। গোপন জায়গা থেকে টেপ আসে, দাড়ি পাগড়িওয়ালা একজন ঘোষণা দেয়, বাহবা জানায়, আর আমেরিকার সুরসুরি বাড়ে! এবার শুরু হয় হত্যাযজ্ঞ। নিরপরাধ মানুষ মেরে জঙ্গি দমনের নামে একের পর এক দেশ ধ্বংশ করে নিজেদের মানবতা প্রতিষ্ঠা করে আমেরিকা। দীর্ঘ দিন পরে আবার স্বীকারও করে যুদ্ধ করাটা ভুল ছিল। কিন্তু ভুলের মাসুল দেয় না। ভুলের মাসুল গুনতে হয় সাধারণ জনগনকে। টুইন টাওয়ার হামলার পর যা ঘটেছে সবারই জানা আছে, আফগানের সুন্দরী বউ আমেরিকার ভাবি!! আফগানে যত সম্পদ আছে সব লুন্ঠন করা শেষে লাদেন গেল পাকিস্তানে। এর পরও আমেরিকা নিজেদের মানবতার প্রতীক হিসাবে নিজেদের জাহির করে, সাধু সাজে। একটি গল্প বলি, এক ব্যক্তি সারা জীবন মানুষের বাড়ি বাড়ি চুরি করেছে। চুরিই ছিল তার পেশা। সেই চোর মৃত্যুশয্যায়। শয্যাপাশে তার সন্তানেরা। চোর তার সন্তানদের ডেকে বললো, বাবারা, আমিতো সারা জীবন মানুষের বাড়ি বাড়ি চুরি করেছি যা তোমরা জান এবং তোমরা আমাকে সব সময় সহযোগীতাও করেছো। আমি আর বেশিক্ষণ মনে হয় তোমাদের মাঝে নাই। সময় হয়ে গেছে। তোমরা দুনিয়ায় এমন কাজ করবে যাতে সবাই আমায় ভাল বলে। এই বলে কিছুক্ষণ পর চোর মারা গেল। শোক কাটিয়ে উঠে চোরের সন্তানেরা চিন্তা করে কি এমন কাজ আমরা করতে পারি যাতে বাবাকে মানুষ ভাল বলবে! তারা এতদিন বাবার সাথে চুরিতে সহযোগীতা করত। বাবা মারা যাওয়ার পর এখন তারাও চুরি করা শুরু করেছে। একদিন ভাইয়েরা মিলে আলোচনায় বসল। সবাই মিলে চিন্তা ভাবনা করলো, কি কাজ করলে মানুষ বাবাকে ভাল বলতে পারে। চিন্তা ভাবনা শেসে এবার তারা চুরি ছেড়ে ডাকাতি শুরু করলো। কয়েক দিন ডাকাতি করার পর মানুষের মুখে বাবা সম্পর্কে ভাল কথা শুনতে না পেয়ে এবার কাজের ধরণ পরিবর্তন করলো। সবাই মিলে ডাকাতি করা শেষে বাড়ি-ঘরে আগুন দিয়ে দেয় এবং ঘরে যুবতী মেয়ে, বাড়ির বউদের পালাক্রমে ধর্ষণ শুরু করলো। এবার ফল পেল নগদে! সবাই বলাবলি করছে, আহারে! ওদের বাবা কত ভাল মানুষ ছিল! শুধু চুরি করতো! আর তার ঘরে কি কুলাঙ্গার হয়েছে, ডাকাতি করে, ডাকাতি শেষে ঘরে আগুন দেয়, জুয়ান বুড়া মানে না, ধর্ষন করে। ওদের চাইতে ওদের বাবা অনেক ভাল ছিল। আমেরিকাকে আমরা ভাল বলি। কিন্তু আমেরিকা সেই চোর যার সন্তান ইসরাইল ডাকাতি শেষে ঘরে আগুন দেয় এবং গুরা-বুড়া মানে না ধর্ষন করে।

যা হোক, আমেরিকা পাকিস্তানের যেখানেই হামলা করা দরকার লাদেন সেখানেই যায়! পাকিস্তানিরাতো এক বিচি ফেলে দেয়া বলদের মত। ওটা না আবাল না দামড়া। আমেরিকাকে সুযোগ দিয়ে নিজেদেরই অস্তিস্ব সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। নিজেরাই এখন একটি জঙ্গি রাষ্ট হিসাবে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে। আর জঙ্গি দমনের নামে সাধারণ মানুষ মেরে আমেরিকা হয়েছে মানবতার দেশ!

আমেরিকা হলো সেই দেশ যে, ইসরাইলকে দিয়ে কার্য সিদ্ধি করে নিজেই আবার মলম নিয়ে দৌড়ায়। ইসরাইলকে দিয়ে বিশেষ এসাইনমেন্ট এক্সিকিউট করতে গিয়ে মাঝে মধ্যে নিজের দেশেও দু’একটা ঘটনা ঘটে যাচ্ছে যা নিরবে সহ্য করছে। কিন্তু ইসরাইল থাকছে ধরাছোয়ার বাইরে। ফেসবুকের কারনে বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। সমর্থিত, অসমর্থিত নানা উৎস হতে তথ্য ভেষে বেড়ায় অনলাইনে। এমন অনেক তথ্যের মধ্যে যে তথ্য ভেষে বেড়াচ্ছে তা হলো আজকের এই আইএসআইএস আমেরিকারই সৃষ্টি! আইএসআইএস এর অন্যতম শ্রষ্টাদের মধ্যে ইসরাইলের প্রাধান্যই বেশি। তবে তারা পানির মত। পাত্রে স্থান নেয়ার সাথে সাথে সেই পাত্রের রূপ নেয়। আইএসআইএস যেহেতু ইসলাম এর নাম ব্যবহার করে, তাই ইসরাইলীরা ইসলাম পন্থির রূপ ধারণ করে থাকতে পারে। বাংলাদেশেও অনেক জঙ্গি পাওয়া যাচ্ছে বা যাদের খোজা হচ্ছে তাদের তালিকায় নব্য ইসলাম গ্রহণকারীর আধিক্য বেশি। মরলে শহীদ, বাঁচলে গাজী, হুরের জন্য মরতে রাজী। জঙ্গিদের কাছে এমন এক মস্তিস্ক প্রক্ষালন যন্ত্র আছে যা দিয়ে মাথা এমন ভাবে ওয়াশ করা হয় যে, যা শেখানো হয় তাই বলে। তাদের মাথায় জেহাদ, জেহাদ আর জেহাদ!! কারন জেহাদে মরলে শহীদ, শহীদ বিনা হিসাবে বেহেস্তে, আর বেহেস্তে হুরের ব্যবস্থা!! তাহলে দুনিয়ায় থেকে কি লাভ, জেহাদে জাব (নাশকতায়), শহীদ হব (অপারেশন থান্ডার বোল্টে গুলি খেয়ে মরব) এই হলো তাদের দর্শণ। পবিত্র কোরআন এসব তথাকথিত শহীদরা পড়ে বা বুঝে বলে মনে হয় না। পড়লে বা বুঝলে এমন কাজে পা বাড়াতো না।

ইসলামের লেবাসে নাকি অনেক ইসরাইলী মোসাদের সদস্য জঙ্গি সদস্য হিসাবে নাম লিখিয়েছে! জঙ্গি মরে কিন্তু ইসরাইলী বাংশোদ্ভুত কোন জঙ্গি মরেছে শোনা যায় নাই। তাই জঙ্গি-মঙ্গি কিছ্ইু না। আমেরিকার ইশারায় ইসরাইলীরা বিশেষ এসাইনমেন্ট এক্সিকিউট করছে এমনটাই ধারনা পাওয়া যাচ্ছে ইন্টারনেট বিশ্বে! ইসরাইলই আজরাইল শান্তিকামী বিশ্বের জন্য!!

asadjewel@gmail.com, www.asadjewel.com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here