বাংলাদেশ শিল্প প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ আইন, ২০১৮
( ২০১৮ সনের ২৫ নং আইন )
[২৯ জুলাই, ২০১৮]
Bangladesh Industrial Enterprises (Nationalization) Order, 1972 রহিতক্রমে পুনঃপ্রণয়নের উদ্দেশ্যে প্রণীত আইন
যেহেতু Bangladesh Industrial Enterprises (Nationalization) Order, 1972 (P.O.No. 27 of 1972) রহিতক্রমে পুনঃপ্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;

সেহেতু এতদ্দ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল:-

সূচী
ধারাসমূহ
১। সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রবর্তন
২। সংজ্ঞা
৩। কর্পোরেশনসমূহের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা
৪। কর্পোরেশনের কার্যালয়
৫। সাধারণ পরিচালনা
৬। পরিচালনা পর্ষদ গঠন
৭। প্রধান নির্বাহী
৮। পরিচালনা পর্ষদের সভা
৯। কর্মচারী নিয়োগ, ইত্যাদি
১০। বিশেষজ্ঞ, উপদেষ্টা, ইত্যাদি নিয়োগ
১১। শিল্পপ্রতিষ্ঠান সরকার কর্তৃক হস্তান্তর
১২। শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারের ক্ষমতা
১৩। কর্পোরেশন কর্তৃক শিল্প প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ
১৪। কতিপয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কর্পোরেশনের করণীয়
১৫। কর্পোরেশনের অনুমোদিত মূলধন
১৬। বাজেট
১৭। কর্পোরেশনের অর্থ ব্যয়
১৮। ঋণ গ্রহণ
১৯। কমিটি গঠন
২০। হিসাব ও নিরীক্ষা
২১। বার্ষিক প্রতিবেদন
২২। কর্পোরেশনের অবসায়ন
২৩। বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা
২৪। প্রবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা
২৫। সম্পদ, দায়, কর্মচারী স্থানান্তরে সরকারের ক্ষমতা
২৬। ক্ষমতা অর্পণ
২৭। রহিতকরণ ও হেফাজত
২৮। ইংরেজিতে অনূদিত পাঠ প্রকাশ
তফসিল
Copyright © 2010, Legislative and Parliamentary Affairs Division
Ministry of Law, Justice and Parliamentary Affairs

 

বাংলাদেশ শিল্প প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ আইন, ২০১৮
( ২০১৮ সনের ২৫ নং আইন )
[২৯ জুলাই, ২০১৮]
     
Bangladesh Industrial Enterprises (Nationalization) Order, 1972 রহিতক্রমে পুনঃপ্রণয়নের উদ্দেশ্যে প্রণীত আইন
যেহেতু Bangladesh Industrial Enterprises (Nationalization) Order, 1972 (P.O.No. 27 of 1972) রহিতক্রমে পুনঃপ্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;

সেহেতু এতদ্দ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল:-

সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রবর্তন
১। (১) এই আইন বাংলাদেশ শিল্প প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ আইন, ২০১৮ নামে অভিহিত হইবে।

(২) এই আইন অবিলম্বে কার্যকর হইবে।

সংজ্ঞা
২। বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থি কোনো কিছু না থাকিলে, এই আইনে-

(১) ‘‘কর্পোরেশন’’ অর্থ ধারা ৩ এ বর্ণিত কোনো কর্পোরেশন;

(২) ‘‘কোম্পানি আইন’’ অর্থ কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ (১৯৯৪ সনের ১৮ নং আইন);

(৩) ‘‘চেয়ারম্যান’’ অর্থ কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান;

(৪) ‘‘তপসিল’’ অর্থ এই আইনের কোনো তপসিল;

(৫) ‘‘পরিচালক’’ অর্থ কোনো কর্পোরেশনের কোনো পরিচালক;

(৬) ‘‘পরিচালনা পর্ষদ’’ অর্থ কোনো কর্পোরেশনের পরিচালনা পর্ষদ;

(৭) ‘‘প্রবিধান’’ অর্থ ধারা ২৪ অধীন প্রণীত প্রবিধান;

(৮) ‘‘বিধি’’ অর্থ ধারা ২৩ অধীন প্রণীত বিধি;

(৯) ‘‘শিল্পপ্রতিষ্ঠান’’ অর্থ বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান যাহা কোনো কর্পোরেশনের অধীন আইন ও বিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত;

(১০) ‘‘সরকার’’ অর্থ কোনো কর্পোরেশন Allocation of Business অনুযায়ী যে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের আওতাভুক্ত উহার ক্ষেত্রে উক্ত মন্ত্রণালয় বা বিভাগ।

কর্পোরেশনসমূহের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা
৩। (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, Bangladesh Industrial Enterprises (Nationalization) Order, 1972 (P. O. No. 27 of 1972) এর অধীন প্রতিষ্ঠিত নিম্নবর্ণিত কর্পোরেশনসমূহ এমনভাবে বহাল থাকিবে যেন উহা এই আইনের অধীন প্রতিষ্ঠিত, যথা:-

(ক) বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন, যাহা প্রথম তপশিলে বর্ণিত পাটজাত দ্রব্য উৎপাদন সংশ্লিষ্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত;

(খ) বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশন, যাহা দ্বিতীয় তপশিলে বর্ণিত প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম তন্তুজাত দ্রব্য দ্বারা সুতা ও বস্ত্র উৎপাদন সংশ্লিষ্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত;

(গ) বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন, যাহা তৃতীয় তপশিলে বর্ণিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত;

(ঘ) বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশন, যাহা চতুর্থ তপশিলভুক্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত;

(ঙ) বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন, যাহা পঞ্চম তপশিলে বর্ণিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত;

(২) প্রত্যেক কর্পোরেশন একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হইবে এবং ইহার স্থায়ী ধারাবাহিকতা ও একটি সাধারণ সীলমোহর থাকিবে এবং এই আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, ইহার স্থাবর ও অস্থাবর উভয় প্রকার সম্পত্তি অর্জন করিবার, অধিকারে রাখিবার ও হস্তান্তর করিবার ক্ষমতা থাকিবে এবং ইহা স্বীয় নামে মামলা দায়ের করিতে পারিবে এবং উক্ত নামে ইহার বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা যাইবে।

কর্পোরেশনের কার্যালয়
৪। কর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয় ঢাকায় অবস্থিত হইবে।
সাধারণ পরিচালনা
৫। প্রত্যেক কর্পোরেশন পরিচালনার জন্য একটি করিয়া পরিচালনা পর্ষদ থাকিবে এবং পরিচালনা পর্ষদ কর্পোরেশনের সকল কার্য সম্পাদন ও উহার সকল ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে পারিবে।
পরিচালনা পর্ষদ গঠন
৬। (১) প্রত্যেক পরিচালনা পর্ষদ একজন চেয়ারম্যান এবং সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অন্যূন ৬ (ছয়) জন পরিচালক সমন্বয়ে গঠিত হইবে।

(২) চেয়ারম্যান এবং পরিচালক সরকার কর্তৃক নির্ধারিত শর্তে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হইবেন।

(৩) চেয়ারম্যান বা অন্য কোনো পরিচালক প্রয়োজনে যেকোনো সময় স্বীয়পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন:

তবে শর্ত থাকে যে, তাহার পদত্যাগপত্র সরকার কর্তৃক গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত কার্যকর হইবে না।

প্রধান নির্বাহী
৭। (১) প্রত্যেক পরিচালনা পর্যদের চেয়ারম্যান প্রত্যেক কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী হইবেন।

(২) চেয়ারম্যান এবং পরিচালকগণ সরকার নির্ধারিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন এবং কার্য সম্পাদন করিবেন।

পরিচালনা পর্ষদের সভা
৮। (১) এই ধারার অন্যান্য বিধানাবলি সাপেক্ষে, পরিচালনা পর্ষদ উহার সভার কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করিতে পারিবে।

(২) পরিচালনা পর্ষদের সভা, চেয়ারম্যানের সম্মতিক্রমে এবং তদ্‌কর্তৃক নির্ধারিত তারিখ, সময় ও স্থানে অনুষ্ঠিত হইবে।

(৩) চেয়ারম্যান পরিচালনা পর্ষদদের সকল সভায় সভাপতিত্ব করিবেন, তবে তাহার অনুপস্থিতিতে তদ্‌কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো পরিচালক সভাপতিত্ব করিবেন।

(৪) অন্যূন ৪ (চার) জন পরিচালকের উপস্থিতিতে সভার কোরাম হইবে, তবে মুলতবি সভার ক্ষেত্রে কোরামের প্রয়োজন হইবে না।

(৫) পরিচালনা পর্ষদের সভায় প্রত্যেক পরিচালকের একটি করিয়া ভোট থাকিবে, তবে ভোটের সমতার ক্ষেত্রে, সভাপতিত্বকারী ব্যক্তির দ্বিতীয় বা নির্ণায়ক ভোট থাকিবে।

(৬) পরিচালক পদের কোনো শূন্যতা অথবা পর্ষদ গঠনে কোনো ত্রুটির কারণে পরিচালনা পর্ষদের কোনো কার্য বা সিদ্ধান্ত অবৈধ হইবে না অথবা কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না।

কর্মচারী নিয়োগ, ইত্যাদি
৯। (১) প্রত্যেক কর্পোরেশন উহার কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য সরকার কর্তৃক অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী এবং, সময় সময়, সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সাধারণ ও বিশেষ নির্দেশনা অনুসরণপূর্বক প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মচারি নিয়োগ করিতে পারিবে।

(২) প্রত্যেক কর্পোরেশনের কর্মচারীগণের নিয়োগ ও চাকরির শর্তাদি প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত হইবে।

বিশেষজ্ঞ, উপদেষ্টা, ইত্যাদি নিয়োগ
১০। প্রত্যেক কর্পোরেশন উহার কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য, প্রয়োজনে, বিশেষজ্ঞ, উপদেষ্টা ও পরামর্শক নিয়োগ করিতে পারিবে।
শিল্পপ্রতিষ্ঠান সরকার কর্তৃক হস্তান্তর
১১। (১) তপশিলভুক্ত কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা উহার কোনো শেয়ার বা স্বত্বাধিকার বা অন্যকোনো অধিকার জাতীয় স্বার্থে, প্রয়োজনে, সরকার সুবিধাজনক পদ্ধতি ও শর্তে কোনো কর্পোরেশন বা ব্যক্তির নিকট বিক্রয় অথবা অন্যবিধ হস্তান্তর করিতে পারিবে:

তবে শর্ত থাকে যে, বিক্রয় অথবা অন্যবিধ হস্তান্তরের পর চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন বা শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় ব্যর্থতার জন্য সরকার বিক্রয় ব্যতীত অন্যবিধ হস্তান্তর চুক্তি বাতিলপূর্বক উক্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান ফেরৎ গ্রহণ করিতে পারিবে।

(২) সরকার কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা উহার কোনো শেয়ার বা স্বত্বাধিকার বা অন্যবিধ অধিকার উপধারা (১) এর অধীন হস্তান্তর বা ফেরত গ্রহণ করিলে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, উহা তপশিল হইতে বিয়োজন বা, ক্ষেত্রমত, উহাতে সংযোজন করিতে পারিবে বা, ক্ষেত্রমত, উক্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান যে কর্পোরেশনে ন্যস্ত হইয়াছিল উহার নিকট হইতে প্রত্যাহার করিতে পারিবে।

(৩) উপ-ধারা (২) এর অধীন জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে –

(ক) এই মর্মে নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে যে, উক্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ধারা ১২, ১৩ ও ১৪ এর বিধান প্রযোজ্য হইবে না বা প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত ধরন, পদ্ধতি বা শর্তাদি প্রযোজ্য হইবে; এবং

(খ) উপ-ধারা (১) এর অধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় বা হস্তান্তর অথবা শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি কোম্পানি আইন অনুযায়ী পরিচালনার সুবিধার্থে সংশ্লিষ্ট সংঘ-স্মারক বা সংঘবিধির অনুবর্তী পরিবর্তনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে।

(৪) সরকার উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা উহার শেয়ার বা স্বত্বাধিকার বা অন্যকোনো অধিকার বিক্রয় বা অন্যবিধ হস্তান্তর করিলে বিক্রয় বা হস্তান্তর পূর্ব সময়কালের জন্য উক্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সভা অনুষ্ঠান, ব্যালান্স শীট, ন্যূনতম চাঁদা, প্রসপেক্টাস, প্রসপেক্টাসের পরিবর্তে বিবরণী, রিটার্ন দাখিল এবং শেয়ার বা অধিকার হস্তান্তর সংক্রান্ত বিষয়ে কোম্পানি আইনের বিধানসমূহ প্রযোজ্য হইবে না।

(৫) সরকার উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা উহার শেয়ার বা স্বত্বাধিকার বা অন্যবিধ অধিকার, অধিকাংশ শেয়ারের মালিক সরকার বা কর্পোরেশন এইরূপ কোনো প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বিক্রয় বা অন্যবিধ হস্তান্তর করিলে এইরূপ বিক্রয় বা হস্তান্তরের জন্য কোনো ট্যাক্স, ফি, লেভি বা চার্জ প্রযোজ্য হইবে না।

(৬) কোনো আইন বা আইনের মর্যাদাসম্পন্ন দলিলে ভিন্নতর যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এইরূপ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা উহার শেয়ার বা স্বত্বাধিকার বা অন্যবিধ অধিকার উপ-ধারা (১) এর অধীন হস্তান্তরিত হইলে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পে-রোলভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ এবং যে কর্পোরেশনের অধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি সরকার কর্তৃক ন্যস্ত হয় উহার প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি, নিয়োগের সূত্র বা উৎস নির্বিশেষে, উক্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানে হস্তান্তরিত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে এবং এইরূপ কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ উক্ত কর্পোরেশন বা উহার অধীন অন্যকোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসাবে বিবেচিত হইবেন না।

(৭) উপ-ধারা (৬) এর অধীন হস্তান্তরিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরির শর্তাবলি নূতন নিয়োগকর্তা কর্তৃক পরিবর্তিত না হওয়া পর্যন্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানটির হস্তান্তরের পূর্বে বিদ্যমান শর্তাদি ও প্রচলিত নিয়ম অব্যাহত থাকিবে।

শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারের ক্ষমতা
১২। তপশিলভুক্ত কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা, ক্ষেত্রমত, কর্পোরেশনে ন্যস্তকৃত কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংঘ-স্মারক অথবা সংঘবিধি অথবা কোনো সনদ, চুক্তি অথবা অন্যবিধ দলিলে ভিন্নতর যাহা কিছুই থাকুক না কেন, সরকার এইরূপ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের-

(ক) দক্ষ পরিচালনার উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে;

(খ) পরিচালনা পর্ষদ অবলুপ্ত করিতে পারিবে এবং নূতন পরিচালক নিয়োগ করিতে পারিবে;

(গ) ব্যবস্থাপনা এজেন্সি চুক্তির অবসান করিতে পারিবে; এবং

(ঘ) সংঘ-স্মারক বা সংঘবিধি অথবা কোনো সনদ, চুক্তি বা দলিল পরিবর্তন বা সংশোধন করিতে পারিবে।

কর্পোরেশন কর্তৃক শিল্প প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ
১৩। (১) তপশিলভুক্ত বা কর্পোরেশনে ন্যস্তকৃত কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড ও কার্যাবলি এতদুদ্দেশ্য প্রণীত প্রবিধান সাপেক্ষে কর্পোরেশন নিয়ন্ত্রণ, তত্ত্বাবধান ও সমন্বয় এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে নূতন শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও উহার উন্নয়ন সাধন করিবে।

(২) তপশিলভুক্ত বা, ক্ষেত্রমত, কর্পোরেশনে ন্যস্তকৃত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, যেরূপ ক্ষমতা অর্পণ করিবে, কর্পোরেশন সেইরূপ ক্ষমতা প্রয়োগ করিবে।

(৩) এই আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন কর্পোরেশন অন্য কোনো আইনের অধীন উহার উপর অর্পিত ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করিতে পারিবে।

(৪) কর্পোরেশন তপশিলভুক্ত বা অন্য কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বা কোনো কোম্পানির শেয়ার অথবা অধিকার ধারণ করিতে পারিবে।

কতিপয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কর্পোরেশনের করণীয়
১৪। এই আইন বা আপাতত বলবৎ অন্যকোনো আইনে ভিন্নতর যাহা কিছুই থাকুক না কেন, যেক্ষেত্রে কর্পোরেশন, কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানের, উহা কোম্পানি আইনের অধীন নিগমিত হউক বা না হউক, অধিকাংশ শেয়ার বা স্বত্বাধিকার বা অন্যকোনো অধিকার ধারণ করে সেই ক্ষেত্রে কর্পোরেশন-

(ক) নিশ্চিত করিবে যে, অনুরূপ প্রত্যেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পরিচালক পর্ষদ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কার্যাবলি পরিচালনা করিতেছে এবং পর্ষদ বাণিজ্যিকভাবে ও দক্ষতার সহিত প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনায় কার্যকর কর্তৃপক্ষ হিসাবে কাজ করিতেছে;

(খ) নিশ্চিত করিবে যে, প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলি পরিচালনায় অনুরূপ প্রত্যেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংঘ-স্মারক ও সংঘবিধি সঠিকভাবে অনুসরণ করা হইতেছে;

(গ) অনুরূপ কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান যদি নিগমিত না হয় তাহা হইলে উক্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে কোম্পানি আইনের অধীন লিমিটেড কোম্পানি হিসাবে নিগমিত করিবার সকল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ যথাশীঘ্র সম্ভব গ্রহণ করিবে;

(ঘ) দফা (গ) এ উল্লিখিত উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, অনুরূপ শিল্পপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংঘ-স্মারক, সংঘবিধি, সনদ, চুক্তি বা অন্যবিধ দলিল সংশোধন করিতে পারিবে;

(ঙ) সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ বিবেচনায়, প্রয়োজনে, একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে অন্য একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সহিত একীভূতকরণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে পারিবে।

কর্পোরেশনের অনুমোদিত মূলধন
১৫। (১) প্রত্যেক কর্পোরেশনের প্রারম্ভিক অনুমোদিত মূলধনের পরিমাণ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত এবং পরিশোধিত হইবে।

(২) প্রত্যেক কর্পোরেশনের অনুমোদিত মূলধন সরকার কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতিতে পরিশোধিত হইবে।

বাজেট
১৬। কর্পোরেশন, প্রতি বৎসর সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে, পরবর্তী অর্থবৎসরের বার্ষিক বাজেট বিবরণী সরকারের নিকট পেশ করিবে এবং উহাতে উক্ত অর্থবৎসরে সরকারের নিকট হইতে কর্পোরেশনের কি পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হইবে উহার উল্লেখ থাকিবে।
কর্পোরেশনের অর্থ ব্যয়
১৭। কর্পোরেশন ধারা ১৬ এর অধীন সরকার কর্তৃক অনুমোদিত বাৎসরিক বাজেট বিবরণীর ভিত্তিতে যেরূপ প্রয়োজন মনে করিবে সেইরূপ অর্থ ব্যয় করিতে পারিবে।
ঋণ গ্রহণ
১৮। কর্পোরেশন উহার কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য, প্রয়োজনে, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, জামানতবিহীন বা জামানতসহ ঋণ গ্রহণ করিতে পারিবে।
কমিটি গঠন
১৯। পরিচালনা পর্ষদ উহার কার্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য, প্রয়োজনে, কমিটি গঠন করিতে পারিবে।
হিসাব ও নিরীক্ষা
২০। (১) কর্পোরেশন যথাযথভাবে উহার হিসাব সংরক্ষণ করিবে এবং লাভ-ক্ষতির হিসাব ও স্থিতিপত্রসহ বার্ষিক হিসাব বিবরণী প্রস্তুত করিবে এবং এইরূপ হিসাব সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক, সময়ে সময়ে, প্রদত্ত সাধারণ নির্দেশনা পালন করিবে।

(২) বাংলাদেশের মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, অতঃপর মহা হিসাব-নিরীক্ষক বলিয়া উল্লিখিত, প্রতি বৎসর কর্পোরেশনের হিসাব নিরীক্ষা করিবেন এবং নিরীক্ষা প্রতিবেদনের প্রয়োজনীয় সংখ্যক অনুলিপি সরকার ও কর্পোরেশনের নিকট পেশ করিবেন।

(৩) উপ-ধারা (২) এ উল্লিখিত নিরীক্ষা প্রতিবেদনের উপর কোনো আপত্তি উত্থাপিত হইলে উহা নিষ্পত্তির জন্য কর্পোরেশন অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।

(৪) উপ-ধারা (২) এ উল্লিখিত নিরীক্ষা ছাড়াও Bangladesh Chartered Accountants Order, 1973 (P.O. No. 2 of 1973) এর Article 2(1)(b) তে সংজ্ঞায়িত কোনো ‘‘Chartered Accountant’’ দ্বারা কর্পোরেশনের হিসাব নিরীক্ষা করা যাইবে এবং এতদুদ্দেশ্যে কর্পোরেশন এক বা একাধিক ‘‘Chartered Accountant’’ নিয়োগ করিতে পারিবে এবং এইরূপ নিয়োগকৃত ‘‘Chartered Accountant’’ সরকার কর্তৃক নির্দিষ্টকৃত হারে পারিতোষিক প্রাপ্য হইবেন।

(৫) কর্পোরেশনের হিসাব নিরীক্ষার উদ্দেশ্যে মহা হিসাব-নিরীক্ষক বা তাহার নিকট হইতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি বা উপ-ধারা (৪) এর অধীন নিয়োগকৃত ‘‘Chartered Accountant’’ কর্পোরেশনের সকল রেকর্ড, দলিলাদি, বার্ষিক ব্যালেন্স সিট, নগদ বা ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, জামানত, ভান্ডার বা অন্যবিধ সম্পত্তি, ইত্যাদি পরীক্ষা করিয়া দেখিতে পারিবেন এবং চেয়ারম্যান, পরিচালক বা কর্পোরেশনের যে কোনো কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করিতে পারিবেন।

বার্ষিক প্রতিবেদন
২১। (১) কর্পোরেশন প্রতি বৎসর তদ্‌কর্তৃক সম্পাদিত কার্যাবলির বিবরণ সংবলিত একটি বার্ষিক প্রতিবেদন পরবর্তী বৎসরের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সরকারের নিকট পেশ করিবে।

(২) সরকার, প্রয়োজনে, যে কোনো সময়, কর্পোরেশনের নিকট হইতে উহার যে কোনো বিষয়ের উপর প্রতিবেদন, বিবরণী বা রিটার্ন আহবান করিতে পারিবে এবং কর্পোরেশন উহা সরকারের নিকট সরবরাহ করিতে বাধ্য থাকিবে।

কর্পোরেশনের অবসায়ন
২২। (১) কোম্পানি আইনে উল্লিখিত অবসায়ন সংক্রান্ত বিধানাবলি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে না।

(২) সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, কর্পোরেশন অবসায়ন করিতে পারিবে।

বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা
২৩। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে।
প্রবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা
২৪। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, কর্পোরেশন, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইন বা বিধির সহিত অসঙ্গতিপূর্ণ নহে এইরূপ প্রবিধান প্রণয়ন করিতে পারিবে।
সম্পদ, দায়, কর্মচারী স্থানান্তরে সরকারের ক্ষমতা
২৫। সরকার, আদেশ দ্বারা, কোনো সম্পত্তি, সম্পদ ও দায়ের অংশবিশেষ এবং কোনো কর্মচারীকে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত শর্তে কোনো কর্পোরেশনের নিকট স্থানান্তর করিতে পারিবে।

ব্যাখ্যা। ‘‘কর্মচারী’’ অর্থে কর্মকর্তাও অন্তর্ভুক্ত হইবেন।

ক্ষমতা অর্পণ
২৬। (১) কর্পোরেশন দক্ষ ও কার্যকরভাবে পরিচালনা করিবার উদ্দেশ্যে পরিচালনা পর্ষদ ইহার ক্ষমতা চেয়ারম্যানের নিকট অর্পণ করিতে পারিবে।

(২) চেয়ারম্যান তাহার ক্ষমতা কর্পোরেশনের কর্মচারীগণের নিকট অর্পণ করিতে পারিবেন।

রহিতকরণ ও হেফাজত
২৭। (১) এই আইন কার্যকর হইবার সঙ্গে সঙ্গে, Bangladesh Industrial Enterprises (Nationalization) Order, 1972 (P.O.No. 27 of 1972) এতদ্দ্বারা রহিত হইবে।

(২) উক্তরূপ রহিত হওয়া সত্ত্বেও, –

(ক) রহিত Order এর অধীন কৃত কোনো কার্য বা গৃহীত কোনো ব্যবস্থা এই আইনের অধীন কৃত বা গৃহীত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে;

(খ) রহিত Order এর অধীন প্রতিষ্ঠিত কর্পোরেশনসমূহ, অতঃপর বিলুপ্ত কর্পোরেশনসমূহ বলিয়া অভিহিত, এর-

(অ) অধীন ন্যস্তকৃত শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহ কর্পোরেশনসমূহের অধীন ন্যস্ত রহিয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে;

(আ) সকল সম্পদ, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, সুবিধা এবং স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি, নগদ ও ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, প্রকল্প এবং অন্য সকল প্রকার দাবি ও অধিকার কর্পোরেশনসমূহের সম্পদ, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, সুবিধা, সম্পত্তি, অর্থ, প্রকল্প এবং দাবি ও অধিকার হিসাবে গণ্য হইবে;

(ই) সকল ঋণ ও দায়-দায়িত্ব কর্পোরেশনসমূহের ঋণ ও দায়-দায়িত্ব বলিয়া গণ্য হইবে;

(ঈ) বিরুদ্ধে বা তদ্‌কর্তৃক দায়েরকৃত কোনো মামলা, গৃহীত কার্যধারা বা সূচিত যে কোন কার্যক্রম অনিষ্পন্ন থাকিলে উহা এমনভাবে চলমান থাকিবে ও নিষ্পন্ন হইবে যেন উহা এই আইনের অধীন কর্পোরেশনসমূহের বিরুদ্ধে বা তদ্‌কর্তৃক দায়েরকৃত, গৃহীত বা সূচিত হইয়াছে;

(উ) সকল চুক্তি ও দলিল, যাহাতে উহা পক্ষ ছিল, কর্পোরেশনসমূহের অনুকূলে বা বিরুদ্ধে এমনভাবে বলবৎ ও কার্যকর থাকিবে যেন কর্পোরেশনসমূহ উহাতে পক্ষ ছিল; এবং

(ঊ) কর্মচারীগণ যে নিয়ম ও শর্তে উহাতে কর্মরত ছিলেন, পরিবর্তিত বা পুনরাদেশ প্রদান না করা পর্যন্ত, সেই একই নিয়ম ও শর্তে কর্পোরেশনের কর্মচারী হিসাবে গণ্য হইবেন।

ইংরেজিতে অনূদিত পাঠ প্রকাশ
২৮। (১) এই আইন কার্যকর হইবার পর সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইনের মূল বাংলা পাঠের ইংরেজিতে অনূদিত একটি নির্ভরযোগ্য পাঠ (Authentic English Text) প্রকাশ করিবে।

(২) ইংরেজি পাঠ এবং মূল বাংলা পাঠের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাইবে।

Copyright © 2010, Legislative and Parliamentary Affairs Division
Ministry of Law, Justice and Parliamentary Affairs

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here