ছোটবেলায় ভাত না খেলে, পড়তে না বসলে, কখনোবা কথা না শুনলে
মা বলতো, তুই যদি এমন করিস, আমি তাহলে থাকব না!
কৌতুহলী হয়ে মাকে জিজ্ঞেস করতাম,
তুমি আমাকে ছেড়ে কোথায় যাবে মা?
মা বলতো, আমি হারিয়ে যাবো, অনেক দূরে হারিয়ে যাবো!
আমি বলতাম, তুমি আমায় ছেড়ে কোথ্থাও যেতে পারবে না,
আমি ঠিকই তোমায় খুজে নেব মা!
মা বলতো, মানুষ একবার হারিয়ে গেলে আর খুজে পাওয়া যায় না বাবা!
মায়ের কথাটা শুনে আমার শীরদাড়া বেয়ে শীতল একটা প্রবাহ বয়ে যেতো।
আমি বলতাম, তুমি আমায় ছেড়ে কোথাও যেতে পারবে না মা!
মা আমাকে আরো ক্ষেপিয়ে তুলতো!
বলতো, আরে বোকা, মানুষ যখন স্রষ্টার কাছে চলে যায়
তখন আর ফিরিয়ে আনা যায় না!
ছলো ছলো চোখে মায়ের মমতা মাখা মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকতাম।
নিরবতা ভেঙ্গে বলতাম, মানুষ স্রষ্টা কাছে কেন যায় তবে?
ভারি গলায় মা বলতেন, এটাই বিধান বাবা, এটাই নিয়ম!
মায়ের কথাগুলো শুনে বুকটা কেমন ভারি হয়ে যেতো,
একরাশ কৌতুহল নিয়ে মাকে বলতাম,
মানুষ স্রষ্টার কাছে গিয়ে কোথায় থাকে মা?
মা দুষ্ট হাসি হেসে বলতো, ঐ দূর আকাশে তাঁরা হয়ে যায়!
আমি বলতাম, তাঁরা হয়ে দূর আকাশে কি করে মায়েরা?
মা বলতো, তাঁরা হয়ে তারা তাদের বাবু সোনাদের দেখে,
তারা ভাত খাচ্ছে কিনা, মায়ের কথামত চলছে কিনা, পড়াশুনা করছে কিনা?
আমি কাদো কাদো কন্ঠে মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে বলতাম,
তুমি কোথাও যাবে না মা, আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না,
আমি তোমার সব কথা শুনবো, সব ভাত খাবো, পড়তেও বসবো!
একদিন মা ঠিকই আমায় ফাঁকি দিয়ে চলে গেলেন!
মায়েরা কখনো মিথ্যে বলে না, ছোট বেলায় যেমন বলেছিলেন,
ঠিক তেমনই কথা রেখে চলে গেলেন হৃদয়টা শুন্য করে!
আজ গভীর রাতে পশুর নদী ধরে কটকা নদীতে ধীর গতিতে চলছে জাহাজ,
সবাই যখন নিদ্রা দেবীর কোলে মাথা রেখে গভীর ঘুমে নিমজ্জিত,
আমি তখন চেয়ার নিয়ে কেবিনের পাশে বসে আকাশ দেখি!
অন্ধকারেরও সৌন্দর্য থাকে, নীরবতারও থাকে সরব সুর!
নদীর দুই তীর ঘন সুন্দরবনের অপরূপ প্রকৃতি, জোঁনাকীরা জ্বলে নিভে
আমাকে বিমোহিত করে বসিয়ে রেখেছে একাকি!
মাথাটা একটু বাকিয়ে আকাশ পানে তাকাতেই নজরে এলো
দূর আকাশে হাজারো কোটি তাঁরার মিটি মিটি চাহনি!
দেখে মনে হলো, মমতাময়ী মায়েরাই কি দেখছে তার বাবু সোনাদের?
মিটিমিটি চোখে তাকিয়ে দেখছে তার বাবুটা কি ভালো আছে,
সবটা ভাত খায় কী, সুপথে কী চলছে তার বাবু সোনাটা?
দীর্ঘদিন পরে আকাশ আমায় জানিয়ে দিলো, মা তোমায় দেখছে
দূর থেকে মা বলছে, ভালো থাকিস বাবা, ঠিকমত চলিস!

০৩ জানুয়ারী ২০২০
কটকা নদী, জামাল-১ জাহাজের ২০৩ কেবিনের সামনে বসে।

6 COMMENTS

  1. I do consider all of the concepts you’ve offered for your post.
    They are really convincing and can definitely work. Nonetheless, the posts are too quick for newbies.
    Could you please extend them a little from subsequent
    time? Thank you for the post.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here