জুন থেকেই শুরু হবে শ্রমিক ছাঁটাই। এমনটাই জানিয়েছেন শিল্পপতিদের এক নেতা। এতে শ্রমিকদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না। কারন? কারন আছে। শ্রমিকরাতো শ্রমিকই। তারা যেখানে যাবে সেখানেই কাজ করে খাবে। বসে বসে খাবে বা বসিয়ে বসিয়ে কেউ তাদের বেতন দেয় এমনটা কোনদিন হয়নি, কোনদিন হবেও না। শ্রমিকরা কারো রক্ত, ঘাম চুষে খায় না, এটা তাদের ধাতে নেই। বরং শ্রমিকদের রক্ত, ঘাম চুষে খেয়ে মোটা হয়ে এখন অনেকেই দামী গাড়ীতে চলেন, জারজ বাচ্চাদের বিদেশে পড়ান, দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে দেশে বউ ড্রাইভারের জিম্মায় রেখে বিদেশে প্রমীলা নিয়ে উল্লাশ করেন তাদেরই সমস্যা হবে। শ্রমিকদের জন্য এখনও দেশে অনেক সুযোগ রয়েছে। দেশে পতিত জমির অভাব নেই, করতে চাইলে কাজেরও কোন অভাব নেই। ছাঁটাই করা শ্রমিকরা গ্রামে চলে আসুন। শহরেও খেটেই খেতেন, গ্রামে এসে খেটেই খাবেন। কেউ কেউ নিজের পায়ে দাড়ানোর সুযোগ পাবেন। শহরে থেকে খাবেন দাবেন আপনি শ্রমিক আর মোটা হবে জব্বার সেই সুযোগ করে দিয়ে লাভ নেই। শ্রমিক ভাইরা গ্রামে চলে আসুন। নিজের যা জমিজমা আছে চাষবাস করুন, না থাকলে অন্যের জমিতে শ্রম দিন, কৃষিতে মনোযোগ দিন অথবা নিজে ব্যবসা করুন, উৎপাদনমুখী কাজ করুন। নিজে কোন নতুন উদ্যোগ নিন। দেখবেন আপনার অবস্থা ফিরবেই। আপনি শ্রম দিয়ে আপনিই খাবেন, মোটাও হবেন। জব্বারের পেটে লাথি মারুন আপনি, আপনার পেটে লাথি মারার সুযোগ দেয়ার কোন মানে হয় না।

চলতি জুন মাস থেকেই তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে শ্রমিক ছাঁটাই শুরু হবে বলে জানিয়েছেন শিল্প মালিকদের সংগঠনের এক নেতা যা মিডিয়াতে প্রচারিত। ঐ নেতা বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বিশ্বে ভোক্তাদের চাহিদা কমে যাচ্ছে। দেশের পোশাক কারখানার কাজও প্রায় ৫৫ শতাংশ কমেছে। এমন অবস্থায় জুন থেকেই শ্রমিক ছাঁটাই করা হবে। এ ব্যাপারে আমাদের মালিকদের কিছুই করার নেই।’ তবে যারা চাকরি হারাবেন তাদের জন্য কী করা যায়, তা নিয়ে সরকারের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

আমাদের দেশের শ্রমিকরা অত্যন্ত দক্ষ। দেশে বিদেশে যেখানেই হাত দিয়েছেন সেখানেই সোনা ফলিয়েছেন আমার দেশের সোনার শ্রমিকরা। দেশের রিজার্ভ এখন উপচে পড়ছে। এই উপচে পড়া রিজার্ভের বেশিরভাগ মুদ্রার জোগান দিয়েছেন প্রবাসী শ্রমিক ভাইয়েরা। প্রবাসী শ্রমিক ভাইয়েরা রক্ত-ঘাম ঝড়িয়ে যে টাকা রোজগার করেন সেটা বিদেশে বিনিয়োগ করেন না, যদি করেন তবে সেখান থেকেও মুদ্রা কামাই করে আবার দেশেই পাঠান। প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো মুদ্রা আমার দেশের এক শ্রেণীর ঘাতক বিদেশে পাচার করে। দেশের এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে শ্রমিকদের একচ্ছত্র অবদান নেই। শ্রমিকরা মালিকের কাজটাকে নিজের কাজ মনে করেই কাজ করে চলেন। কিন্তু প্রশ্ন আসে, মালিকরা কী কোন দিন এই শ্রমিকদের নিজের মনে করেছেন। সংকট এসেছে এটা সত্য। সরকারের কাছ থেকে দেন দরবার করে হাজার হাজার কোটি টাকা প্রনোদনার নামে আদায় করে নিয়েছেন। সংকটের ছল ছুতায় শ্রমিকদের বেতন বন্ধ করে দেয়া হয়, ছাটাই করা হয়। অথচ শ্রমিকদের যতই সংকট থাকুক না কেন তারা মালিকের জন্য জীবন দিয়ে কাজ করে যান। এবার সংকটের সময় শিল্প কারখানা হঠাৎ বন্ধের ঘোষণা দেয়া হলো। শ্রমিকরাতো বসে বসে খাওয়ার মত টাকা জমিয়ে রাখতে পারে না, কারন তাদের আয় সেই সীমার নয়। ঘোষণা পেয়ে যার যার বাড়ি চলে গেলেন। হঠাৎ আবার তাদের কাজে যোগদান করতে বলা হলো। যোগদানে ব্যর্থ হলে চাকরি থাকবে না বলে হুমকি দেয়া হলো। লকডাউনের কারনে দেশের সকল গণপরিবহন বন্ধ। একেকটা শ্রমিক জীবন হাতের তালুতে নিয়ে হেটেই রওয়ানা দিলো। যেভাবে পেরেছে উপস্থিত হয়েছে নিজ নিজ কারখানায়। ভোগান্তির শেষ হলো না তাতে। আসার পর আবার বলা হলো চলে যাও। আবার সেই ঝুকি নিয়ে ফিরে গেলো বাড়িতে। বলা হয়েছিলো বাড়িতে থাকো, বেতন পেয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবতায় কে কতটুকু বেতন পেয়েছিলো তা আমরা সবাই জানি। শ্রমিকদের দুর্দশার কথা আর মালিকের খেয়ালিপনার কথা কারো অজানা নয়। শ্রমিকদের যদি মালিকরা ভালোই বাসতো তবে তাদের প্রতি কখনোই বিমুখ হতো না। এই শ্রমিকরাই মালিকদের তুলে ধরেছে। দিন রাত পরিশ্রম করেছে যে মালিকের জন্য সেই মালিক আজ মহামারির ছুতায় তাদের ঘার ধাক্কা দিচ্ছে। সন্তানতুল্য শ্রমিকদের যদি আপনারা ভালোই বাসতেন তবে বিপদের কালে ছুড়ে ফেলে দিতে পারবেন না। বাবা মা যতই সংকটে পড়ুক সন্তানকে ফেলে দেয় না। এতদিন কামাই করেছে, চড়া মুনাফা করেছেন, সরকারের কাছ থেকে নানান নামে প্রনোদনা নিয়েছেন। সেই আখের থেকে আজ বিপদের কালে শ্রমিকের জন্য কিছু খরচ করলে এমন কী কমে যাবে?

আমাদের কোন শ্রমিকই প্রনোদনা চায় না। তারা শ্রম দিয়ে ন্যায্য মজুরি চায়। শ্রমিকরা কেউ ঋণ খেলাপি হয় না। কোন শ্রমিক কর রেয়াত নেয় না, বিশেষ বিশেষ সুবিধা ভোগ করে না। আমাদের শ্রমিকদের শ্রমের বিনিময়ে যারা হাজারো সুবিধা ভোগ করে তারাই সুযোগ পেলে শ্রমিকদের পেটে লাথি মারে। আমাদের শ্রমিকরা কেউ নির্বাচনে দাড়াতে টিকিট কেনেন না। শ্রমিকদের ঠকিয়ে টাকা করে সেই টাকায় টিকিট কিনে নেতা হন যারা তারাই শ্রমিকদের আহারে হাত বসায়।

শ্রমিক ভাইয়েরা সংকিত না হয়ে মেরুদন্ড একটু সোজা করে ঘুরে দাড়ান। বার বার আপনাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকিয়েছে রক্তচোষারা। ঘুড়ে দাড়ানোর এখনই সময়। শ্রম দিন, সেটা ঢাকায় কিংবা নিজের এলাকায়। আপনার শ্রমে ঘামে আপনার দেশকে, সন্তানকে, পরিবার পরিজনকে ভালো রাখবে। স্বাবলম্বী হওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। যে যেমন পারবেন, যে যেমন করবেন ফল তেমনই পাবেন। নিজের ভাগ্য নিজের চেষ্টায় ফেরাতে হবে। কারো মুখাপেক্ষি হয়ে বসে থাকলে আপনার ভাগ্য ফিরবে না। উদ্যোগি হন, চাকর নয়। ছাটাইকৃত শ্রমিকদের জন্য আগাম শুভ কামনা থাকলো দেশবাসীর পক্ষ থেকে। শ্রমের জয় হোক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here