দরুন খবর! খবরটা দেখেই চোখ আটকে গেলো। খবরটা চোখ আটকানোর মতই। দেশের ছাগলই যেখানে এক পোয়া দুধ দিতে পারে না সেখানে পাঁঠা নাকি এক লিটার পর্যন্ত দুধ দিচ্ছে! চমকপ্রদ খবর না? হ্যা, সমকাল জানিয়েছে, জয়পুর হাটের পাঁচবিবি উপজেলায় পাঁঠায় প্রতিদিন আধা লিটার থেকে এক লিটার দুধ দিচ্ছে! একই সাথে আরো একটা খবর পড়ে চোখ কপালে উঠে গেলো! সাকিব মানে আমাদের প্রাণ প্রিয় সাকিব আল হাসান। বিশ্বের নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার। যে কীনা ব্যাটিংয়ে অল রাউন্ডার, বোলিংয়ে অলরাউন্ডার, ফিল্ডিংয়ে অল রাউন্ডার, ক্যাপ্টেন্সিতে অলরাউন্ডার। সেই অলরাউন্ডারকে দুই বছরের জন্য মাঠের বাইরে থাকতে হবে! আইসিসি সাকিব আল হাসানকে এই শাস্তি দিয়েছেন। কারন আর কিছুই নয়, ম্যাচ ফিক্সিং! আরে নাহ! ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েছে একাধিকবার কিন্তু তা আইসিসিকে জানায়নি। আইসিসির এহেন কান্ডে আমি বলতে চাই আই ছিঃ ছিঃ (মানে আমি ছিঃ ছিঃ বলে ঘৃণা জানাচ্ছি আইসিসিকে)। অনেকে বলছেন লঘু পাপে গুরুদন্ড! আমি বলতে চাই এটা কোন পাপই হয়নি। কত লোকে কত প্রস্তাবইতো দিবে! সেই প্রস্তাবে রাজি হওয়া অপরাধ হতে পারে।
যে দেশে পাঁঠায় দুধ দেয় সেই দেশের একজন অলরাউন্ডার ক্রিকেটার ম্যাচ ফিক্সিংয়ের জন্য নয় বরং প্রস্তাব পাওয়ার অপরাধে দুই বছরের জন্য স্থগিত আদেশ পেয়েছে আর্ন্তজাতিক কর্তাদের কাছ থেকে এটাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কর্তা কর্তৃপক্ষের মধ্যেও মনে হয় দুধ দেয়া পাঁঠা আছে! আসলে সাকিব হলো গরীবের সুন্দরী বউ। যার দিকে সকলেরই নজর আছে, থাকবে। আর গরীবের সুন্দরী বউ সকলেরই ভাবি সেটা আমরা ভালোভাবেই জানি এবং বুঝি!
গণমাধ্যম তাদের খবরে জানান, ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পাওয়ার পর তা গোপন করায় বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে আইসিসি, যার মধ্যে এক বছরের শাস্তি দোষ স্বীকার করায় স্থগিত থাকবে। ভাবাযায়, কী দয়ার শরীর ও মন আইসিসির? মনে আরো প্রশ্ন জাগে, ‘তোমার মেয়ে ছলিমদ্দির পোলার লগে রাইতে বাইর হইয়া গিয়া তিন মাস পর চার মাসের গর্ভবতী অবস্থায় বাড়িতে ফিরছে তাতে সমস্যা নেই! ওরা একটু ফুর্তি করেছে এই আরকি! আর আমার মাইয়া ঘর থেকে উঠানে নামছে তাই সে ঘৃণার পাত্রী! আমার মেয়ে উঠান ঝাড় দিতে নামছে না মুততে নামছে সেটা বিবেচ্য বিষয় না! সে ঘরের বাইরে উঠোনে দাড়িয়েছে তাই সে ‘বাইর হওইন্যা মাগী’ হইয়া গেছে?
২০১৯ সালের ২৯ মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সাকিবের এই শাস্তির ঘোষণা দেয় আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা। অপরাধ এবং শাস্তি দুটোই মেনে নেয়ায় শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ থাকছে না সাকিবের। এই শাস্তির ফলে ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত কোনো ধরনের ক্রিকেটে মাঠে নামতে পারবেন না বাংলাদেশের এই অলরাউন্ডার। আমার মতে সাকিব আল হাসান ঠিক কাজই করেছেন। যারা ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পাওয়ার অভিযোগে মাঠে নামা স্থগিত করতে পারেন তাদের কাছে আপীল টাপীল করে কোন লাভ আছে কি? যে শাস্তি দিতে মন চেয়েছে তা দিয়েছে, বরং বরই কৃপা করেছেন যে আজীবনের জন্য সাকিব আল হাসানকে নিষদ্ধ করেননি। কারন সাকিব আল হাসানের জন্য অনেকেই অলরাউন্ডার হতে পারছেন না, সাকিবকে টপকাতে পারছেন না, রেকর্ড ভাঙ্গতে পারছেন না। সাকিব না থাকলে শক্ত দেয়াল আর থাকছে না, অনেকের নাদান পোলাও অলরাউন্ডার হওয়ার সুযোগ পাবে এখন!
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইসিসি জানায়, ২০১৮ এর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসের মধ্যে তিন বার সাকিবের কাছে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব আসে। কোনোবারই এ বিষয়ে আইসিসিকে কিছু জানাননি এই অলরাউন্ডার। আসলে সাকিবের উপর রাগটা কি অন্য জাগায়? সাকিব প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় অনেকের কী বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়ে গেছে? গরিবের সুন্দরী মেয়ে প্রতিদিন হাজারো প্রেমের প্রস্তাব পায়। বখাটেরা প্রস্তাবতো দিবেই! সাকিব আমলে নেয়নি এটাই কী তার অপরাধ? সাকিব প্রস্তাবে রাজি হলে হয়তো বা এমন শাস্তির মুখোমুখি হতে হতো না। এ যেন আমাদের দেশের গ্রাম্য শালিসদারদের বিচার!
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজ চলাকালে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পান সাকিব। পরবর্তীতে সে বছরেরই আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ-কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব ম্যাচের আগেও তাকে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেন জুয়াড়িরা। আর একবার তার কাছে প্রস্তাব আসে ত্রিদেশীয় সিরিজ অথবা আইপিএল নিয়ে। এতবার প্রস্তাব দিয়েছে সেটা সাকিব কর্তাদের জানাননি, তাহলে জানালো কে? যারা জানিয়েছে তাদের কথায়ই কী শাস্তিটা দিতে হলো? সাকিব জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি তাই জানায়নি। কিন্তু যাদের ক্ষতি হয়েছে তারা আইসিসিকে জানিয়েছে নিশ্চই! কর্তাদের কথায় মনে হচ্ছে সাকিব প্রস্তাবে রাজি না হয়ে অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলেছে! তাই তাকে আজ শাস্তির মুখোমুখি হতে হলো! আইসিসির উচিত ছিলো এমন দৃঢ় মনোবলের, সৎ চিন্তার, ব্যক্তিত্ববান খেলোয়ারকে আইসিসির প্রধান করা। যাকে চার মাসে তিন বার এবং বার বার প্রস্তাব দিয়েও প্রলুব্ধ করতে পারেনি, নীতি থেকে টলাতে পারেনি। কতটা সৎ হলে ফিক্সিংয়ের মাধ্যমে অঢেল টাকা গ্রহণের সুযোগ হাতছাড়া করে!
সাকিব, তোমার সাথে আমরা আছি, তোমার পাশে আমরা আছি, তোমার পাশে আছে পুরো দেশ। কোন ভয় নেই। তুমি প্রস্তাবে রাজি হওনি, তুমিই শ্রেষ্ঠ, তুমিই মহান। তোমাকে প্রস্তাব দিয়ে রাজি করতে ব্যর্থ হয়ে আজ যারা তোমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে শাস্তির মুখোমুখি করেছে তারাই অধম, তারাই ঘৃণ্য। তুমি তোমার কাজটা সঠিকভাবেই করেছো, তুমি প্রস্তাব পেলেও জুয়ারিদের কাছে বিক্রি হওনি। আমরা গর্বিত। তোমাকে যদি সারা জীবনের জন্য নিষিদ্ধ করে তাতে কিছুই যায় আসে না। তোমার যতটুকু দেয়া উচিত ছিলো তার চেয়ে অনেক বেশিই তুমি দিয়েছো। তুমি হৃদয়ের মনিকোঠায় অবস্থান করছো, ফিক্সিংয়ের প্রস্তাবে রাজি হওনি এটা আইসিসি কর্তৃক প্রমানিত হওয়ায় হৃদয়ে আরো শক্ত করে অবস্থান করবে।
সব শেষে একটা কৌতুক বলে মনটাকে হাল্কা করি। একবার গাভির দুধ দোয়ানো প্রতিযোগিতা হয়েছিলো। প্রাথমিক রাউন্ড শেষে সব কাটছাটের পর ফাইনাল হবে তিন দেশের মধ্যে। আমেরিকা, চীন ও বাংলাদেশ। প্রথমে আমেরিকানের পালা। প্রথমে আমেরিকান তাদের দেশের বিভিন্ন কম্পিউটিং পদ্বতিতে প্রায় ২৫ লিটার দুধ বের করলো। সবার করতালি, জয়ধ্বণিতে মাঠ গরম। দ্বিতীয় প্রতিযোগী চীনের পালা শুরু হলো। প্রযুক্তির দেশ চীন তাদের দেশের বিভিন্ন প্রযুক্তি দ্বারা প্রায় ৪০ লিটার দুধ বের করলো। সবার আরও জোরে করতালি, মাঠ প্রায় গরম হয়ে গেলো স্লোগানে স্লোগানে! এবার বাংলাদেশর পালা। বাংলাদেশেরতো আবার প্রযুক্তি বা কম্পিউটিং পদ্বতি কোনোটাই নাই। বাংলাদেশের প্রতিযোগী হাত দিয়েই শুরু করলো দুধ দোয়ানোর কাজ। সবাই তো রেজাল্টের জন্য অস্থীর। দেখা গেলো যে বাংলাদেশর প্রতিযোগী মাত্র ৫ লিটার দুধ বের করেছে! আমেরিকা, চীন তো হাপ ছেড়ে বাঁচলো! হিসাব মতে চীন প্রথম আর আমেরিকা দ্বিতীয়। বিচারক যখন রায় দিবে তখন বাংলাদেশী প্রতিযোগী দাড়িয়ে বললো আমার একটা কথা আছে। বিচারক বললো কি? সে বললো, আমার সাথে আসেন। তখন বিচারক সহ সব সাংবাদিক এবং দর্শকরা গেলো বাংলাদেশীর সাথে। তখন বাংলাদেশী তার গরুটি দেখিয়ে বললো, ভাইয়েরা আমি ষড়যন্ত্রের শিকার, কোন হারামজাদা যেনো গাভীর বদলে এই ষাড়টি (দামড়া) রেখে গেছে। তাই অনেক কষ্টে ষাড় (দামড়া) দোয়াইয়া মাত্র ৫ লিটার দুধ বের করেছি, এর বেশি আর পারলাম না। এখন বিচারের ভার আপনাদের সবার উপর! তখন সকলই চিন্তা করলো, যে লোক কিনা ষাড়ের থেকেই ৫ লিটার দুধ বের করতে পারে সে গাভীর থেকে না জানি কত লিটার দুধ বের করতে পারবে। তখন সবাই বাংলাদেশীকে বিজয়ী ঘোষনা করলো এবং চমৎকার নৈপুণ্যর জন্য তাকে বোনাস পুরুষ্কারও দিলো। আমরা সেই দামড়া দোয়ানোর ক্ষমতা রাখি, পরিস্থিতিতে পড়লে পাঁঠা দোয়াইয়া এক লিটার দুধ বের করতে পারি! আমরা অদম্য এক জাতি!