সরল মানুষ - সহজ কথা
-সমকালীন ভাবনা -হৃদয়ে শব্দ ক্ষরণ -যেমন আছি লন্ডনে মুল বই পেতে হলেকচুরিপানা সরিয়েই উন্নয়নের নৌকা এগিয়ে নিতে হবে
রাজনীতির উপর দূর্বৃত্তের নজর পরেছে! এটা নতুন কিছু নয়। দূর্বৃত্তর কু-নজর রানজীতির উপর পূর্বেও ছিলো, এখন যেমন আছে তেমনি ভবিষ্যতেও থাকবে। দূর্বৃত্তরা রাজনীতির খালে কচুরিপানার মত। কচুরিপানার বৃদ্ধি যেমন দ্রুত হয় আবার পচেও দ্রুত। কচুরিপানার বন্ধণ খুব দৃঢ় হয়। কিন্তু এখন সময় এসেছে কচুরিপানা সরিয়ে উন্নয়নের নৌকা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। চকুরিপানা অপসারণের সময় কিছু ধ্বংস হবে, কিছু স্রোতের তোড়ে ভেসে যাবে অজানায়, কিছু সরে গিয়ে অন্য জমিতে অবস্থান নিবে। তবে ধ্বংস ক্রিয়া চালু করা, অব্যাহত রাখা এখন সময়ে দাবী। দূর্বৃত্তরা আমাদের সমাজে রাজনীতির উপর ভর করে জগদ্দল পাথরের মত জেকে বসেছে। আসুন এদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করি, এদের অপসারণ করি, এদের ঘৃণা করি।
দূর্বৃত্ত সম্পর্কে ধারনা নিতে গিয়ে যে যে শব্দের ব্যবহার দেখলাম তাতে কারা কারা দুর্বৃত্ত সহজেই বুঝা যায়। বজ্জাত, বজ্জাৎ: [বজ্জাত্] (বিশেষ্য) চালাক; ধূর্ত; বদমাশ; দূর্বৃত্ত; দুষ্ট; দুর্জন; অসৎকর্মকার; মন্দ জন্মের লোক, অন্যের ক্ষতি করার মানসিকতাসম্পন্ন ব্যক্তি। বজ্জাতি (বিশেষ্য) বদমায়েশি; দুর্বৃত্তপনা; দুষ্টামি। বিশেষ্যগুলো যাদের নামের পাশে বিশেষণ হিসাবে বসে তাদের গুণ বা দোষ নির্দেশ করে তা দেখলে আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে হাজারো বদ মানুষের মুখচ্ছবি। এরা দেশের রক্ত, দেশের মানুষের রক্ত খেয়ে মোটাতাজা হয়েছে। এদের নির্মূল করা যাবে না তবে নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
সম্প্রতি দেশের একটি প্রচীন দলের নেত্রী তার দুটি অঙ্গ সংগঠনকে অনেকটা ছাই দিয়ে ধরেছেন। প্রথমত তাদের সহযোগি ছাত্র সংগঠনের বড় দুটি পদের কর্তাকে বহিস্কার করেছে। কারন আর কিছুই নয়, পদের নাম ভাঙ্গিয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যর কাছে চাঁদা পাইয়ে দেয়ার জন্য চাপাচাপি করেছেন, অশোভন আচরণ করেছে। শোনাযাচ্ছে ঈদ বকসিসের নামে তারা উন্নয়ন কাজের এক ঠিকাদরের কাছ থেকে কোটি টাকা সালামিও নিয়েছেন। সত্যি-মিথ্যা আমরা হয়তো জানি না। তবে এটুকু জানি, পদ পাওয়ার সাথে সাথে তাদের চরিত্র বদলে যায়, চলাফেরার স্টাইল বদলে যায়, বাসস্থানের চিত্র বদলে যায়। যারা একসময় রিক্সায় চড়ে ক্যাম্পসে আসতেন তারা পদ পাওয়ার সাথে সাথে দামী গাড়ি ব্যবহার করেন! ছাত্র হয়ে কোন চাকুরী-ব্যবসা না করেও লাখ টাকার ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন। পাঁচ বছর পদে থাকার পরে ব্যাংকের পরিচালক হয়ে যান।
একটা ব্যাংক খুলতে কত টাকা লাগে অনেকেই হয়তো জানেন না। ব্যাংক খুলতে ব্যাংক কোম্পানি আইন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায় চারশত কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন প্রয়োজন হয়। ব্যাংক-কোম্পানি আইন ১৯৯১ অনুসারে ‘১(এক) বৎসর অতিবাহিত হইবার পর ৩ (তিন) জন স্বতন্ত্র পরিচালকসহ কোন ব্যাংক-কোম্পানীতে সর্বমোট ২০ (বিশ) জনের অধিক পরিচালক থাকিবে না’। পরিশোধিত মূলধন পরিচালকরা যোগান দেন। ছাত্রলীগ নেতারা মাত্র পাঁচ বছর নেতৃত্ব দিয়ে বিশজন পরিচালকের একজন হয়ে যায় এবং চারশো কটি টাকার একটা অংশ যোগান দিয়ে পরিচালক হন। এতেই বুঝাযায় তারা কি পরিমান টাকা অবৈধ পথে আয় করে থাকে! একসময় আমরা ঈদের সালামি পেতাম এক টাকা থেকে একশ টাকা। এখন অনেকে একশ টাকা থেকে এক হাজার টাকা পায়। আমাদের সোনার ছেলেরা ঈদ সালামী এক কোটি থেকে শতকোটি টাকা দাবী করে। কতটা দূর্বৃত্ত হলে এমনটা করতে পারে ভাবাযায়?
ছাত্র নেতাদের পরেই শুরু হয়েছে যুব নেতাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে অভিযান। একেকজন যুবনেতা সাত আটজন দেহরক্ষি নিয়ে চলেন। তাদের দেহের কতই না দাম! তারা কতই না নিরাপত্তা হীনতায় জীবনযাপন করছিলেন এতোদিন। রাষ্ট্র তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে জেলখানায় রাখার ব্যবস্থা করে ভালই করেছেন। স্বাধীন দেশে বর্তমান সময়ে যদি নিরাপত্তাই না পায় তবে আর কিইবা করার আছে! নিরাপত্তাহীন ভাববেন নাই বা কেন? তাদের কর্মকান্ডই তাদের নিরাপত্তাহীন করে তুলেছে।
একেকজন সোনর যুবক টেন্ডারবাজি করে, ক্যাসিনো পরিচালনা করে, মাদক ব্যবসা করে টাকার পাহাড় গড়ে তুলেছেন। রাত পোহালেই কোটি কোটি টাকা তাদের ঘড়ে ঢোকে। সেসব সোনার ছেলেদের বৃদ্ধ মায়েরাও দেড়শো কোটি টাকার এফডিআর হোল্ডার! নিজের নামেতো আছেই। সোনার ছেলেরা যুবক তাই যুব নেতা। যুব নেতা তাই তাদের রক্ত গরম। সেই গরম রক্ত ঠান্ডা করতে বিদেশী মদ, বিয়ার, বাবা (ইয়াবা ট্যাবলেট) প্রয়োজন হয়। সোনার ছেলেদের মা-বাবার প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা। মায়ের নামে রাখে এফডিআর আর বাবাকে জ্বালিয়ে ঘন ধোয়া টেনে নেয় শ্বাসযন্ত্র দিয়ে। নেবে না কেন, সারারাত জেগে ক্যাসিনো চালাতে হবে, রাত জাগতে বাবার ভূমিকা তুলনাহীন যে! এতো পরিশ্রমের পর একটু বিনোদন প্রয়োজন, ঘরে বিবির কাছে যাওয়ার সময় কই? তাই জুয়ার আসরে, ক্যাসিনোতেই চলে জলসার আয়োজন। জলসায় নাচন-কোদনের জন্য মডেল, নায়িকার ব্যবস্থাও নাকি থাকে। সোনার ছেলেরা যখন জলসাঘরে রক্ত ঠান্ডা করায় ব্যস্ত তখন হয়তো নিজের ঘরের সুন্দরী বউ বাড়ির ড্রাইভারের সাথে ঘাম ঝড়ায়! অবৈধ টাকায় সন্তানরা নেশায় ব্যুদ হয়ে থাকে সেদিকে খেয়াল করার সময়ও পায় না তারা। অফিসে নগদ টাকা থাকে দশ কোটির উপরে! থাকে অস্ত্র, গোলা-বারুদ, নেশার দ্রব্য! সব ব্যবস্থাই আছে তাদের, শুধু নেই শান্তি! আসলে শান্তি বেগমদের টাকায় পাওয়া যায় কিন্তু টাকায় শান্তি বিক্রি হয় না।
নগদ টাকা বা এফডিআর থাকা দোষের কিছু নয়। বৈধ আয় থাকলে কোন সমস্যা নেই। কেউ কেউ দেখলাম রেল লাইনের ধারের কোন বস্তি থেকে উঠে দেশের অভিজাত এলাকা গুলশানে আস্তানা গেড়েছেন। কেউ কেউ একাধিক দল বদল করে নিজেদের টিকিয়ে রেখেছে। আসলে তারা দল বদলায় না, একটা দলই সরে সেটা হলো সরকারী দল। বৈধ অর্থশালী মানুষ অফিসে, বাসায় এত নগদ টাকা রাখেন না। তাদের টাকার নিরাপত্তা দেয়ার জন্য ব্যাংক বসে আছে ভল্ট খুলে। লেনদেন হবে ব্যাংকের মাধ্যমে। একমাত্র অবৈধ অর্থই ব্যাংকে লেনদেন করা সমস্যা।
এই দূর্বৃত্তর বিচরণ বা চলাচল শুধু রাজধানীতে বা বড় বড় বিভাগীয় শহরেই নয়। জেলা-উপজেলা পর্যায়েও আছে। বড় জায়গায় বড় দূর্বৃত্ত আর ছোট জায়গায় ছোট দূর্বৃত্ত। জেলা পর্যায়ে পদ পাওয়ার জন্য হেন কাজ নেই কথিত নেতারা করে না। পদ পাওয়ার আগেই নিজেদের মধ্যে চলে ভাগাভাগি। কেউ আশায় থাকে এলজিইডির, কেউ থাকে সড়ক ও জনপথের, কেউ থাকে পাবলিক হেলথ দখল নেয়ার আশায়, আবার কেই থাকে পিডব্লিউডির আশায়। এগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে টেন্ডারবাজী করে ঠুন্ডা টনি’রা হয়ে উঠে সমাজে জননেতা! টেন্ডারের সিডিউল বিক্রি এসপি অফিসেও হয়। সেখানকার দখল অবশ্য কেউ নিতে চায় না!!
রাজনীতিতে সকল নেতা খারাপ না। এখনও শহরে, জেলায়, উপজেলায় ভালো ভালো নেতারা আছে। ভালো নেতারা আছে বলেই তাদের কারনে টিকে আছে রাজনীতি। একটা কমিটিতে হাতে গোনা দুই-চারজন দূর্বৃত্ত থাকে। ঐ দুই-চারজনের জন্যই বদনামের ভাগিদার হতে হয় গোটা সংগঠনকে। উপরে যাদের কথা এতক্ষণ কীর্ত্তন করলাম তারা সবাই আসলে কচুরিপানার মত। এদের ঝেটিয়ে বিদায় করতে হবে। উনিশশো তিয়াত্তর সালের তিন জুলাই পূর্বদেশ পত্রিকার লীড নিউজ ছিলো ‘উদ্বেল কুষ্টিয়া জাতির পিতাকে বরণ করলো ।।আওয়ামী লীগ থেকে দুর্নীতিবাজদের বের করে দাও, জীবন দিয়ে জনগণের দুর্দশা মোচন করবো-বঙ্গবন্ধু’। ছিচল্লিশ বছর পর বঙ্গবন্ধু কন্যার কার্যক্রম দেখে সেই কথারই প্রতিধ্বনি শুনতে পাচ্ছি। মহান নেতা যা চেয়েছিলেন, হয়তো করে যেতে পারেননি, তাঁর কন্যা সেই পথেই হাটছেন। নিজের সমালোচনা করা, নিজের অঙ্গে পচন ধরলে চিকিৎসা করা, প্রয়োজনে কেটে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ। রোগকে জিইয়ে রাখেন বোকারা। অসুস্থ সামজে পরজীবীরা শরীরে ভর করতেই পারে, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে এবং চেষ্টা করলে সুস্থ্য থাকাটা কঠিন কিছু নয়। রোগকে ঢেকে রাখাই খারাপ। আমাদের আশা ও বিশ্বাস দল থেকে দুর্নীতিবাজদের বের করে দিয়ে জনগণের দূর্দশাকে মোচন করবে জননেত্রী। দূর্বৃত্ত নামক কচুরিপানা পরিস্কার করে উন্নয়নের নৌকাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন প্রিয় নেত্রী।
asadjewel@gmail.com, www.asadjewel.com